সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তাভেলা হত্যার পরিকল্পনাকারী শনাক্ত : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যার পরিকল্পনাকারী ও মূল হোতারা শনাক্ত হয়েছে। এখন এদের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। এই খুনে জঙ্গিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। গুলশানে কূটনীতিক পাড়ায় হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর গতকাল এমন  দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। দুর্গাপূজা ও আশুরার নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। কবে তা শেষ হবে তার সময়সীমা দিতে পারব না, তবে এইটুকু বলতে পারি মাস্টারমাইন্ডদের ধরতে পারব। পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবে সর্বসাধারণের মতো বিদেশিরাও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন। আতঙ্কিত হওয়ার ন্যূনতম কোনো কারণ নেই। বিদেশিদের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান, ইব্রাহীম ফাতেমী, ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের সড়কে তাভেলাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা। ইতালির এই নাগরিক একটি এনজিওতে কাজ করতেন, ঢাকায় একাই থাকতেন। তার ছয় দিনের মধ্যে রংপুরের পল্লীতে একই কায়দায় খুন করা হয় জাপানের নাগরিক হোশি কোনিওকে। বাংলাদেশে নাগরিকদের চলাফেরায় যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা জারির মধ্যে এসব হত্যাকাণ্ডের পর জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী একটি ওয়েবসাইট দাবি করে, মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি গোষ্ঠী এই খুনের দায়িত্ব স্বীকার করে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই দাবি নাকচ করে বলা হয়, বাংলাদেশে এই সংগঠনের কোনো সংগঠিত তৎপরতা নেই। তাভেলা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘ন্যূনতম জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা’ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামানও।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কাজ করে। এই হত্যার তদন্তে কেউ রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হতে পারেন, এমনটি আদৌ সত্য নয়।’ কমিশনার বলেন, বিদেশিরা স্বেচ্ছায় নিরাপত্তা না চাইলেও তাদের নিরাপদে দুর্গোৎসব উপভোগ করতে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ও জনসমাগম বেশি হয় এমন পূজামণ্ডপগুলোতে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, হ্যান্ড মেটালডিটেক্টর, পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা, অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব, বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তামূলক নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইভ টিজিং, পকেটমারসহ যে কোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে থাকছে বাড়তি নজরদারি ও চেকিং ব্যবস্থা। ঢাকায় ২২২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব মণ্ডপে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করতে বসানো হয়েছে কন্ট্রোলরুম। মণ্ডপগুলোতে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট তল্লাশি চালাবে। যানজট নিরসনে মণ্ডপে আগত পুণ্যার্থীদের যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপাসনালয়ে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার আলাদা আলাদা রাস্তা নির্ধারিত রয়েছে। এসব রাস্তায় চেকপোস্ট থাকছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও বস্তুতে তল্লাশি চালানো হবে। প্রতিবারের মতো এবারও অধিকাংশ প্রতিমারই বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজঘাট ও আশুলিয়ার বিআইডব্লিউটিএর ল্যান্ডিং ঘাটে। এসব এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার থেকে বিসর্জনের সময় সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হবে। আলাদা সময়ে প্রতিমা বিসর্জন ও তাজিয়া মিছিল : ডিএমপি কমিশনার বলেন, আগামী ২৩ অক্টোবর শুক্রবার দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন ও পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পুলিশের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জন শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে ৬টার মধ্যে করতে হবে। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে শনিবার দিবাগত রাত পর্যন্ত তাজিয়া মিছিল হবে। তিনি বলেন, ঢাকার দুটি স্থানে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট ও উত্তরার বিআইডব্লিউটিএর ল্যান্ডিং স্টেশন। এর মধ্যে যারা ওয়াইজঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেবেন তাদের সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জড়ো হতে হবে। জুমার নামাজ থাকায় বেলা ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা করা যাবে না।

 

সর্বশেষ খবর