বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে শতকোটি টাকার সম্পদ

অরক্ষিত সুন্দরবন ২

সামছুজ্জামান শাহীন, সুন্দরবন থেকে ফিরে

সিডর ও আইলার পর দেশি-বিদেশি বিপুল অর্থ ব্যয়ে সুন্দরবন সুরক্ষায় অবকাঠামো নির্মাণসহ নতুন জলযান, পন্টুন ও গ্যাংওয়ে তৈরি বা মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে লবণাক্ততা দিন দিন সম্পদগুলোর জীবনীশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে শতকোটি টাকার সম্পদ। জানা যায়, সিডর ও আইলায় সুন্দরবনের বনসম্পদের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি বনকর্মীদের ব্যবহৃত অফিসঘর, থাকার স্থান, পন্টুন, গ্যাংওয়ে, ইঞ্জিনচালিত জলযান সম্পূর্ণ ধ্বংস বা আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। এগুলোকে নতুন করে কার্যক্ষম করতে ব্যয় করা হয় শতকোটি টাকা। এর অধিকাংশ অর্থই দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিছু এসেছে সরকারি তহবিল থেকে। এ টাকা দিয়ে সুন্দরবন বিভাগের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ৭৫টি ক্যাম্প ও স্টেশন অফিস মেরামত করা হয়। বনপ্রহরীদের থাকার জন্য নির্মিত হয় নতুন একতলা ও দোতলা ২১টি ভবন। নতুন ও পুরনো মিলিয়ে ৯০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাকে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। ৭৫টি লোহা ও কাঠের পন্টুন এবং গ্যাংওয়ে স্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে সুন্দরবনের মধ্যে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে পায়ে চলার জন্য কাঠ দিয়ে পথ, ওয়াচ টাওয়ার তৈরিসহ মিঠাপানির জলাধারের জন্য খনন করা হয় একাধিক পুকুর। কিন্তু এগুলো এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লবণাক্ততার আগ্রাসনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া ফরেস্ট স্টেশনে দেখা যায়, সেখানকার পন্টুন, গ্যাংওয়ের লোহার পাতগুলোর রং উঠে মরচে ধরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। কাঠের তৈরি পর্যটকদের পায়ে চলার পথের কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে, যা পর্যটকদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। ওয়াচ টাওয়ারও ভেঙে পড়ার উপক্রম। দুটি পাকা ভবনের রং নষ্ট হয়ে পলেস্তরায় লবণ জেঁকে বসেছে। দ্বিতল ভবনটির পূর্ব পাশের বেলকনিটি ভেঙে পড়েছে। একই সঙ্গে নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনের জেটি ও ভবনের একাংশও ভেঙে পড়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. জহির উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুন্দরবন লবণাক্ত এলাকা। এখানে বারো মাসই পানি ও আবহাওয়ায় লবণাক্ততার প্রকট প্রভাব থাকে। ফলে যে কোনো অবকাঠামো বা সরঞ্জামের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হলে দ্রুত জীবনীশক্তি হারাতে বাধ্য। এ জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খুবই জরুরি। বিশেষ করে পাকা ভবনগুলো, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, পন্টুন ও গ্যাংওয়ে প্রতি বছরই নিয়মিত রং করাসহ মেরামত জরুরি। কিন্তু এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজে কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে বিপুল সম্পদ চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর