শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইসি প্রভাবিত হলে গণতন্ত্রের বিপদ

মাহমুদ আজহার

ইসি প্রভাবিত হলে গণতন্ত্রের বিপদ

মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন- ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদিচ্ছাই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো দল বা গোষ্ঠীর পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। কারও পক্ষে প্রভাবিত হওয়া যাবে না। এটা হলে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বিপদ। সর্বশেষ সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচনে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এবার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ইসিকে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।’

গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা বলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তার মতে, ‘স্থানীয় সরকারের এ পদ্ধতিতে নির্বাচন ইসির চেয়ে সরকারের অগ্নিপরীক্ষা বেশি। দলীয় একক প্রার্থী নির্বাচন করার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনসহ তৃণমূলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের নিরপেক্ষ থেকে বিতর্কমুক্ত নির্বাচন উপহার দেওয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতের নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নির্দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে আসছে। হঠাৎ করে এ ধরনের উদ্যোগ কী প্রভাব ফেলতে পারে, সেদিকে সরকারকেই বেশি খেয়াল রাখতে হবে। এখন ক্ষমতাসীন সরকারকেই সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহায়তা করতে হবে।’ সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রভাব কী হবে, সে জন্য আমাদের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। এক দফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরই এ নিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে। এখনই এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা ঠিক হবে না। দীর্ঘদিন ধরে নির্দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে এলেও এর চরিত্র ছিল দলীয়। বিগত সিটি নির্বাচনেও এর পুরোপুরি প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল কোনো প্রশ্ন তোলেনি। সুতরাং স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হলে কী হতে পারে, এ জন্য আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো পথ নেই।’ ছহুল হোসাইন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছু সমাজসেবী অংশ নিতেন। তাদের প্রতি তৃণমূলের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও ছিল অনেক। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে না গিয়েও নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতেন। তৃণমূলের উন্নয়নসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাদের সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু এখন তারা অনেকাংশে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন। আবার কেউ কেউ দলীয় প্রতীকেও নির্বাচনে যেতে পারেন। তফসিল ঘোষণার পরপরই তাদের ভূমিকাও স্পষ্ট হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো গণতন্ত্রে পরমতসহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো হিংসাÍক মনোভাব দেখা যায়। প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে নানা অগণতান্ত্রিক আচরণও করা হচ্ছে। বিরোধী দল বা মতকে স্তব্ধ করে দেওয়ার মানসিকতা কাজ করে। এটা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

ছহুল হোসাইন বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূলের রাজনীতি একটি শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে। সাংগঠনিকভাবেও রাজনৈতিক দলগুলো মজবুত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আইনকে পুরোপুরি মেনে কাজ করতে হবে। সব দলে গণতন্ত্রচর্চা করতে হবে।’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে দেশ এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে জড়ানো ঠিক হবে না। বিদেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

 

সর্বশেষ খবর