শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খালেদার ফেরার অপেক্ষায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

খালেদার ফেরার অপেক্ষায় বিএনপি

বিএনপির প্রায় ২০টি সাংগঠনিক জেলা কাউন্সিলের উপযোগী। কিন্তু দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে না ফেরায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাউন্সিলের অনুমতি দিচ্ছেন না। তিনি দেশে ফিরলেই পুরোদমে শুরু হবে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে সারা দেশে নেতৃত্ব যাচাইয়ে জরিপ চালিয়েছে বিএনপি। দলীয়ভাবে একটির পাশাপাশি বিএনপিপ্রধান পৃথক আরেকটি জরিপ চালিয়েছেন। নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এসব জরিপকেও গুরুত্ব দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ত্যাগী নেতাদের কোনোভাবেই যেন কমিটি থেকে বাদ না পড়েন-সে লক্ষ্যেই চালানো হয়েছে এ জরিপ। খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই দলীয়ভাবে চালানো জরিপ তার হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, নওগাঁ, পাবনা, ঝিনাইদহ, খুলনা মহানগর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, বান্দরবান, লক্ষীপুর, সিলেট জেলা ও মহানগর, সুনামগঞ্জ, দিনাজপুরসহ আরও কয়েকটি জেলার থানা ও পৌরসভা কাউন্সিলের উপযোগী হয়ে আছে। যে কোনো সময় এসব জেলায় কাউন্সিল করা যেতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই এসব জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এরই মধ্যে নীলফামারী, সৈয়দপুর, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেহেরপুর ও রাঙামাটিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপির জেলা নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে।

সূত্রমতে, দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী জেলা, পঞ্চগড়, পটুয়াখালী, বরিশাল উত্তর, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, হবিগঞ্জ, বগুড়া, কুমিল্লা দক্ষিণ, চাঁদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে। এসব জেলায় বিএনপিপ্রধানের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত ৯ আগস্ট বিএনপি এবং এর ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। ওই দিন কেন্দ্র থেকে এ সম্পর্কিত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা/মহানগর/উপজেলা/থানা/পৌর এলাকায় দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিনিধিদের সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে কমিটি করতে ব্যর্থ হলে দলের পক্ষ থেকে নতুন কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে হাতেগোনো কয়েকটি জেলায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অবশ্য অধিকাংশ জেলার নেতৃত্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নানা কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন না জানিয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন থানা ও পৌরসভা পর্যায়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। মাঠপর্যায়ে চালানো জরিপেও এসব তথ্য উঠে এসেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ওই সব এলাকায় জরিপকে অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনে ওই সব কমিটি বাতিলও করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সারা দেশে অন্তত ২০০ থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পকেট কমিটি গঠনের সংস্কৃতি প্রায় দুই দশকের। এ থেকে মুক্তি পেতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। আমরা এ নিয়ে সতর্ক আছি।’

জেলা পর্যায়ে বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরপরই কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করবেন খালেদা জিয়া। এ বছরের শেষ দিকে এ কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী কাউন্সিল করা হবে। বড় পরিসরে কাউন্সিল করতে না পারলে প্রয়োজনে গুলশান কার্যালয়ে বেগম জিয়া সাংগঠনিক জেলাভিত্তিক মতামতের ভিত্তিতে কাউন্সিল সম্পন্ন করবেন। বাছাই করবেন বিএনপির নতুন নেতৃত্ব। তবে এবার বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামোয় বেশকিছু পরিবর্তন আসবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

জানা যায়, তৃণমূল থেকে একটি সুস্পষ্ট ধারণা নিতেই দলীয়ভাবে পৃথক জরিপ চালানোর নির্দেশনা দেন বেগম জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় ৫০ সদস্যের একটি টিম তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক জরিপ চালায়। ইতিমধ্যে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার বেশির ভাগেরই জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। খালেদা জিয়া দেশে ফেরার আগেই বাকিগুলো সম্পন্ন করা হবে। এরপর এসব জরিপের চিত্র বেগম জিয়ার কাছে তুলে ধরা হবে। বিএনপিপ্রধানের আলাদা জরিপের সঙ্গে এগুলো মিলিয়ে তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ভোটের অঙ্ক, রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জরিপ চালানো হয়ে থাকে। বিএনপিও নানাভাবে তৃণমূলের নেতৃত্ব সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছে, যাতে আগামী দিনে দলের একটি শক্তিশালী কমিটি হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ত্যাগী নেতাদের সামনে নিয়ে আসা যায়।’ জানা গেছে, এবার দল পুনর্গঠনে ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয়দের দলীয় পদ ও দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। যোগ্য ও সাহসীদের নেতৃত্বে আসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলের ‘নিবেদিত’ ও ‘সংগ্রামী’ নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব দিতে বেগম জিয়া নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জরিপের ক্ষেত্রে বিগত দুটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে কারা সক্রিয় ছিলেন, কারা কারাগারে ছিলেন কিংবা কারা হামলা-মামলার শিকার হয়ে আত্মগোপনে আছেন, সেগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছে। দলের জনপ্রিয় ক্লিন ইমেজের নেতাদেরও খুঁজে আনা হয়েছে। আবার দায়িত্বে থেকেও যারা কারাগারে যাননি, কিংবা নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর রাখেননি, তাদেরও পৃথক তালিকা করা হয়েছে। নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির অন্য এক নেতা বলেন, এখনকার দুনিয়ায় বিভিন্ন ইস্যুতে জরিপ চালানো হয়। জরিপের ফলাফল সব সময় পুরোপুরি সঠিকও হয় না। তবু একটা ধারণা পাওয়া যায়। নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জরিপ হলে তা খারাপ হবে না। একটি ধারণা পাওয়া যাবে। জরিপের মূল্যায়নে যারা যোগ্য হবেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে জরিপবিরোধী বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, জরিপ দিয়ে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি করতে হবে নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। জরিপ অনেক ক্ষেত্রে একতরফাও হয়। এতে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস কমে যেতে পারে। এসব বাদ দিয়ে খালেদা জিয়া আন্দোলন চলাকালে যাদের পাশে পেয়েছেন তাদের নেত্বত্বে কমিটি দেওয়াই দলের জন্য ভালো।

সর্বশেষ খবর