মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভয়াবহ ভূমিকম্প, নিহত দেড় শতাধিক

ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তানে অনেক হতাহত বাংলাদেশেও অনুভূত

প্রতিদিন ডেস্ক

ভয়াবহ ভূমিকম্প, নিহত দেড় শতাধিক

ভূমিকম্পে গতকাল পাকিস্তানের কোহাত অঞ্চলে ধসে পড়া একটি বাড়ি -এএফপি

উত্তর আফগানিস্তানে আঘাত হানা এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে গতকাল কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশে তেমন হতাহতের ঘটনা না ঘটলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত পাকিস্তানে ১৩০, আফগানিস্তানে কমপক্ষে ১৭ জনের মৃত্যুর  খবর পাওয়া গেছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুর্গম স্থান থেকে আরও মৃত্যুর খবর আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রায় ছয় মাস পর আফগানিস্তানে এ ভূমিকম্প হলো। নেপালে এপ্রিলের ভূমিকম্পে ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি¡ক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, বাংলাদেশ স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৯ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আফগানিস্তানের জারমের ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের হিন্দুকুশ পাহাড়ি অঞ্চল। স্থানটি রাজধানী কাবুল থেকে ২৫৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। ভূপৃষ্ঠের ২১২ কিলোমিটার গভীরতায় আলোড়নের কারণে সৃষ্টি হয় এ ভূকম্পন। পাকিস্তান ও ভারতের কয়েকটি এলাকায়ও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। পাকিস্তানের স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলের খবরে দেখানো হয়, অনেক উঁচু ভবন থেকে বাসিন্দারা বেরিয়ে এসে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। এ ছাড়া ভারতেও ভূমিকম্পের আতঙ্কে সাধারণ মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে মেট্রোরেলও। কিছুক্ষণ পর পর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে আপডেট হতে থাকা পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে গতকাল রাত ৮টায় বলা হয়, পাকিস্তানের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আফগান সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভবন ও ভূমিধসে কমপক্ষে ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মূল ভূমিকম্প আঘাত হানার ৪০ মিনিট পর ৪ দশমিক ৫ মাত্রার আফটারশকে আরও ক্ষতি হয়েছে। আরও আফটারশকের আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো দুর্গম পর্বতাঞ্চল হওয়ায় আগামী কয়েক দিনে আরও মৃত্যুর খবর পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে ডনের প্রতিবেদনে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরের প্রাদেশিক প্রধান আবদুল রাজ্জাকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় তালোকান শহরের একটি স্কুল থেকে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মৃত্যু হয় ১২ ছাত্রীর। আর পূর্বাঞ্চলীয় নাগরহার প্রদেশে সাতজন, নূরিস্তানে দুজন এবং কুনার প্রদেশে তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়। ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ভয়ানকভাবে কেঁপে উঠলেও সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিবিসির খবরে, উত্তরের দুর্গম এলাকায় ২৮ জন এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গিলগিট-বালতিস্তানে আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। করিমাবাদ শহরের বাসিন্দা আনাসকে উদ্ধৃত করে বিবিসির খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধস সৃষ্টি হয়ে হুনজা নদীতে গিয়ে পড়েছে। চিত্রল প্রদেশের পুলিশপ্রধান শাহজাহানকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স লিখেছে, সেখানে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পেশোয়ারেও একজন নিহত হয়েছেন। সেখানে অন্তত দেড়শ মানুষ আহত অবস্থায় লেডি রিডিং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাদখাশন প্রদেশের গভর্নর সালাহ উবাইদুল্লাহ আবিদ জানান, তার এলাকায় অন্তত ৪০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এদিকে দুলুনিতে ভারতের বিভিন্ন শহরেও মানুষ আতঙ্কে ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে অনেক স্কুল ও অফিস থেকে লোকজনকে বের করে আনা হয়। বিবিসি জানিয়েছে, ভূমিকম্প শুরু হলে দিল্লির মেট্রোরেল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এক টুইটে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিরূপণের নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিবিসির খবরে বলা হয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত এই তিন দেশেরই রাজধানীতে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে কাবুল, ইসলামাবাদ ও দিল্লির ভবনগুলো প্রায় মিনিটখানেক ধরে দুলতে থাকে। রাওয়ালপিন্ডি ও পেশোয়ার শহরের বেশ কিছু ভবন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ভূকম্পনের ফলে ফোন লাইন বিকল হয়ে গেছে। দিল্লিতে আতঙ্কিত শত শত লোক এ সময় ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। জানা যায়, এবার আফগানিস্তানের যে স্থানে ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র ছিল, এর কাছাকাছি স্থানে ২০০৫ সালের অক্টোবরে হওয়া ভূমিকম্পে ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং সাড়ে তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।

বাংলাদেশেও অনুভূত : আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্প বাংলাদেশেও অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটা ৯ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে ভূকম্পনটি অনুভূত হয়। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে দুই হাজার ৩১১ কিলোমিটার দূরে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে।

সর্বশেষ খবর