বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চাক্কি রাসেলের নেতৃত্বে গুলি করে রুবেল

তাভেলা হত্যায় জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘চাক্কি রাসেল একটা বিদেশি লোকরে দেখাইয়া বলে, ওই লোকটারে গুলি করতে হবে। কালা রাসেল ভাই হোন্ডা চালায়। বিদেশি লোকটার কাছাকাছি  আইলে আমি হোন্ডা থেকে নেমে ওই লোকটাকে পরপর চারটা গুলি করি।’ গুলশানে ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার খুনের ঘটনায় ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেছে পুলিশের হাতে আটক তামজীদ আহমেদ রুবেল। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেট শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালতে সোমবার জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দির একটি কপি এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

জবানবন্দিতে তামজীদ আহমেদ রুবেল জানান, ‘আমি বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টার হোসেন মার্কেটের তৃতীয় তলায় ২১৭ নম্বর দোকান মোবাইল সলিউশনে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করতাম। আমি কালা রাসেল ভাইয়ের বাসার কাছেই থাকতাম। কালা রাসেল ভাইয়ের বোন আমার খালাতো বোনের বান্ধবী। আমি কালা রাসেল ভাইয়ের বাসায় আসা-যাওয়া করতাম এবং তার সাথে আড্ডা দিতাম। আমার এক বন্ধু দক্ষিণ বাড্ডার জনি ইয়াবা ব্যবসা করত। কালা রাসেল ভাই আমাকে ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দেয় বেচে দেওয়ার জন্য। আমি ওই ইয়াবাগুলো জনিকে দিই। জনি প্রথম ১০০ পিস ইয়াবা বেইচা টাকা দিলেও ৪০০ পিস ইয়াবার কোনো টাকা দেয় নাই। সে পালাইয়া যায়। ওই ইয়াবা বেচার ৫০ হাজার টাকা কালা রাসেল ভাই চাইত। এই টাকা নিয়ে আমি একটু পেরেশানির মধ্যে ছিলাম। গত কোরবানির ঈদের দিন আমার বন্ধু বিপুসহ আমি আর কালা রাসেল ভাই তার বন্ধু চাক্কি রাসেল ভাইয়ের বাসায় যাই দক্ষিণ বাড্ডা বাজার গলিতে। সেখানে কালা রাসেল ভাই আমাদের আইসক্রিম খাওয়ায়। চাক্কি রাসেল ভাই এক ফাঁকে আমাকে বলে, একটা কাজ আছে, থাইকো, কালা রাসেল তোমাকে পরে বিস্তারিত বলবে। এরপর আমি আর বিপু তাদের বাসায় যাই। বিপুর বাসায় রাতে দাওয়াত খাই। আমি কালা রাসেলের বোনের ফ্ল্যাটে মাঝে মাঝে ঘুমাইতাম। ওই রাতে অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে আমি ওই ফ্ল্যাটে ঘুমাইতে যাই। ফ্ল্যাটটা কালা রাসেলের বাসার পিছনে জেনারেটরের গলিতে। কোরবানির ঈদের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কালা রাসেল ভাই এবং চাক্কি রাসেল ভাই এসে আমাকে ঘুম থেকে তোলে। আমাকে বলে জরুরি কথা আছে। আমি বাসায় যাইয়া নাশতা করে আইলে তারা দুজনই আমারে বলে যে, গুলশান-২-এ গুলি কইরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে হবে। তারা দুজন আমার সাথে থাকবে বলে। চাক্কি রাসেল আমাকে বলে, কালা রাসেল ভাই ইয়াবা বিক্রির যে চলি­শ হাজার টাকা আমার কাছে পায়, সেটা আর দিতে হবে না। ঈদের আগে আমি ১০ হাজার টাকা কালা রাসেল ভাইকে দিই। গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১ ঘটিকার সময় আমি কালা রাসেল ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার সময় কমার্স কলেজের গলিতে কালা রাসেল ভাই এবং চাক্কি রাসেল ভাইকে দেখতে পাই। তারা দাঁড়াইয়া ছিল। চাক্কি রাসেল আমাকে বলে, কাজটা দ্রুত করতে হবে। কালা রাসেল ভাই আমাকে মধ্য বাড্ডা বাজারের কসাই গলি থেকে ভাঙ্গারি সোহেলের কাছ থেকে একটা পিস্তল নিয়ে আসার জন্য বলে। ভাঙ্গারি সোহেলের সাথে গলিতে দেখা করতেই সে আমাকে পিস্তল দিবে। আমি কসাইগলিতে যাইয়া ভাঙ্গারি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তলটা নিই। ওইটা কাগজে মোড়ানো ছিল। সে ওই সময় আমাকে জিজ্ঞাসা করে, পিস্তলটা কোন এলাকায় যাবে। আমি কিছু জানি না বলি তাকে। আমি কালা রাসেল ভাইয়ের বাসার নিচে এসে পিস্তলটা চাক্কি রাসেল ভাইয়ের নিকট দিই। ২৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টার দিকে আমি প্ল্যান অনুযায়ী কালা রাসেল ভাইয়ের বাসার সামনে যাই। যাইয়া খাম্বার সামনে তাদের দুজনকে হোন্ডা নিয়া দাঁড়ানো দেখি।

 এফজেড হোন্ডা সাদা রঙের। ওই হোন্ডাটা শরিফ ভাইয়ের। চাক্কি রাসেল ভাই কালা রাসেল ভাইয়ের বাসার নিচে পিস্তল থেকে কীভাবে গুলি করতে হবে আমাকে অনেকবার দেখাইয়া দেয়। পিস্তলে পাঁচটা গুলি আছে। ওইটাও দেখাইয়া দেয়। আমি আর কালা রাসেল ভাই কিছুক্ষণ সেখানে থাইকা হোন্ডা নিয়া গুলশান-২-এর সিটি করপোরেশনের গেটের সামনে যাই। কালা রাসেল ভাই হোন্ডা চালাইছে। সেখানে যাইয়া চাক্কি রাসেল ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। এর কিছুক্ষণ পর চাক্কি রাসেল একটা বিদেশি লোকরে দেখাইয়া দেয় ৯০ নম্বর রোডে। ওই লোকটা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল। সে বলে ওই লোকটারে গুলি করতে হবে। তখন আমি কালা রাসেল ভাইয়ের হোন্ডায় উঠি। কালা রাসেল ভাই হোন্ডা চালায়। আমরা ওই লোকটিকে ওভারটেক কইরা ঘুইরা আসি। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। হোন্ডা ঘুরাইয়া ওই বিদেশি লোকটার কাছাকাছি আইলে আমি হোন্ডা থেকে নেমে ওই লোকটাকে পরপর চারটা গুলি করি। তারপর হোন্ডায় উইঠা চাক্কি রাসেলরে নিয়া গলি গলি ঘুইরা দ্রুত চইলা আসি। আমি ১২ নম্বর গলির মাথায় নাইমা যাই। তারা দুজন কালা রাসেল ভাইয়ের বাসার নিকট যায়। আমি সেখানে যাইয়া দুজনকে দেখি। আমি পিস্তলটা চাক্কি রাসেলকে দিয়া বাসায় চলে আসি। পরের দিন দুপুরবেলা আমাকে কালা রাসেল ভাই খবর দেয়। আমি সন্ধ্যার দিকে প্রাণ-আরএফএলের মাঠে যাইয়া কালা রাসেলকে দেখতে পাই। আমরা দুজন কথা বলতে বলতে কালা রাসেল ভাইয়ের বোনের ফ্ল্যাটের গলিতে যাই। সেখানে চাক্কি রাসেল আমাকে পিস্তলটা ভাঙ্গারি সোহেলকে দিয়া আসতে বলে। আমি কসাইগলিতে পিস্তলটা সোহেলকে দিয়া আসি। আবার তাদের কাছে গেলে হাসতে হাসতে বলি, আমাকে দিয়া অনেক বড় কাজ করাইয়া ফেলাইছেন। কিছু টাকা-পয়সা কি পাব না? তখন তারা একজনের দিকে আরেকজন তাকাইয়া হাসে। বলে, টাকা তারা পায় নাই। পাইলে আমাকে দিবে। ঘটনার পরও কালা রাসেল ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। এরপর পুলিশ আমাকে ধরে। পুলিশ ধরার আগ পর্যন্ত আমি এলাকায়ই ছিলাম। আমি এ ধরনের কাজ করার জন্য দুঃখিত। এই আমার বক্তব্য।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর