বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কাইয়ুম এখন কোথায়

সাখাওয়াত কাওসার

কাইয়ুম এখন কোথায়

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুম কোথায়? ইটালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডে কাইয়ুমের নাম আসার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র। মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম হওয়ার কারণে প্রবাস জীবনের বেশিরভাগ সময় কাইয়ুম সেখানেই অবস্থান করছেন। তবে প্রকৃতপক্ষেই তার বর্তমানে অবস্থান কোথায় এ বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো গোলক ধাঁধায় খোদ গোয়েন্দারাও। শিগগিরই ইন্টারপোলের রেড নোটিসে কাইয়ুমের নাম ঝুলছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। দুই ডজনের বেশি মামলার আসামি এই নেতা বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই মালয়েশিয়াকে সেকেন্ড হোম বানিয়েছিলেন কাইয়ুম। সেখানেই বিনিয়োগ করেছেন অঢেল টাকা পয়সা। আবাসন ব্যবসা ছাড়াও মালয়েশিয়ান বিভিন্ন ব্যাংকে জমিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। পরিকল্পনামাফিকই তিনি গত কয়েক বছর ধরে এসব সম্পদ বানিয়েছেন। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার ঠিক আগেই কাইয়ুম পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে অবস্থান করেই দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকেন তিনি। তার নির্দেশেই অনুগতরা অংশ নেয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে। গত বছরের শেষের দিকে এবং চলতি বছরের শুরুতে বিএনপির আন্দোলনে আর্থিক জোগানদাতা হিসেবে কাইয়ুমের ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে। সূত্র মতে, কাইয়ুম মালয়েশিয়া ছাড়াও মাঝে মাঝে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং থাইল্যান্ডে যাতায়াত করেন। গত ৫ অক্টোবরও তিনি সর্বশেষ ব্রিটেনে যান। বর্তমানে তিনি ওয়েস্ট লন্ডনের কিংস্টোন এলাকাতেই অবস্থান করছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরই তিনি পুনরায় মালয়েশিয়া ফিরবেন। তবে গতকাল মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় কাইয়ুম তার অবস্থান মালয়েশিয়ায় বলে দাবি করেছেন। ইতালিয়ান নাগকির তাভেলা সিজার হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে নিজের নাম জড়ানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। কাইয়ুম বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে আরেক জজ মিয়ার নাটক বানানোর চেষ্টা করছে সরকার। আমার মাধ্যমে বিএনপিকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা চলছে। দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের দেখাতে চায়, ইতালিয়ান নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি জড়িত। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাদের ধরা হয়েছে, তারা কেউই আমার নাম বলেননি। তাই এখন আমার ভাই যিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তাকে বাড্ডার গুদারাঘাটের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে ডিবি। চার দিন ধরে আমার ভাই ডিবি কার্যালয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানতে পেরেছি। উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার মুখ দিয়ে আমার নাম বলানো।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে বলির পাঁঠা বানানোই সরকারের উদ্দেশ্য। যে মোটরসাইকেল জব্ধ করা হয়েছে, তার মালিক হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ বাড্ডা থানার এক নেতা। নাম তার শরীফ। আমি সাত থেকে আট মাস ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছি। বিগত সিটি নির্বাচনের আগেই আমি দেশ ছেড়েছি। কিন্তু সরকার অসৎ উদ্দেশে আমাকে জড়িয়ে বিএনপিকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে। ঘটনার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে না বলে আমার বিশ্বাস।’ এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে কাইয়ুম লন্ডনে অবস্থান করছেন। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আগেই তিনি দেশ ছাড়েন। তবে এর মাঝে তিনি গোপনে পার্শ্ববর্তী দেশ হয়ে স্থলপথে দেশে এসেছিলেন। অল্প কিছুদিন অবস্থান করে পুনরায় ওই পথেই দেশ ছাড়েন তিনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারকে চাপে ফেলতেই তিনি এই নীলনকশার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তবে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে আদায় করা তথ্য সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়েছে। তার দেওয়া নির্দেশ মতো ভাই মতিন পুরো কিলিং মিশনের সমন্বয় করেন। তবে শুধু তাভেলা হত্যা নয়, জাপানি নাগরিক হত্যায়ও অর্থের জোগান দেন কাইয়ুম। মাঝে মাঝেই তিনি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং কুয়ালালামপুরে যাতায়াত করেন। শিগগিরই তার ব্যাপারে ইন্টারপোলে রেড নোটিস যাচ্ছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর