শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সংকট পিছু ছাড়ছে না জামায়াতের

প্রায় প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছেন নেতা-কর্মীরা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সিদ্ধান্ত আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। একই অপরাধ একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ দলের শীর্ষ অনেক নেতাকেও ফাঁসির রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিকে স্থানীয় নির্বাচন দলগতভাবে করার সিদ্ধান্তে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছে না জামায়াত। এ ছাড়াও প্রায় আট বছর ধরে কেন্দ্রসহ সারা দেশে কার্যালয় বন্ধ। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা মামলায়-হামলায় বিপর্যস্ত। প্রায় প্রতিদিনই নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন। নিষিদ্ধ সংগঠন না হলেও মামলা-মোকদ্দমার কারণে সভা-সমাবেশ দূরে থাক প্রকাশ্য চলাফেরা করতেও পারে না। সবমিলিয়ে চরম বিপাকে সংগঠনটি।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরীর জামায়াতের দায়িত্বশীল এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো ঘটনা ঘটলেই সরকারের দায়িত্বশীলসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এটা জামায়াত-শিবিরের কাজ। তিনি বলেন, আদালতে প্রমাণ হওয়ার   আগে এমনটা বলা ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, এমনিতেই মামলায় বিপর্যস্ত জামায়াত-শিবির। প্রতিদিন নেতা-কর্মী নতুন করে গ্রেফতার হচ্ছে। এ অবস্থায় আবার দলীয় প্রতীকে জামায়াত নির্বাচন করতে না পারায় দায়িত্বশীলরা মনে করছেন জামায়াতের সংকট পিছু ছাড়ছে না। জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে জামায়াত। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হলেও এর ‘প্রতিবাদে’ কোনো কর্মসূচিই ঘোষণা করতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে রহস্যময় নীরবতা চলছে দলটিতে। রাজপথে নামলে কোণঠাসা জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারের আরও কঠোর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার রাস্তায় না থাকলে রয়েছে রাজনীতিতে গন্তব্য হারিয়ে ফেলার শঙ্কা। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জোটপ্রধান বিএনপিকে নিয়ে জামায়াত আগে থেকেই হতাশ। অন্য শরিক দলগুলোর সমর্থনও পাচ্ছে না। এদিকে সারা দেশের কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতারাও কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। ছাত্রদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটায় আÍীয়স্বজন আর পরিবার। এখন এই হতাশা আরও বেড়েছে। বিএনপি কী করবে, কতদূর করতে পারবেÑ এই নিয়ে জামায়াতের দুশ্চিন্তা গাঢ় হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই রাজপথে অনেকটা নীরব ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী। সহিংসরূপে রাজপথে আজকাল দেখা যাচ্ছে না জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের। কারণ হিসেবে নেতা-কর্মীরা বলেন, ইতিমধ্যে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে লক্ষাধিক, আসামি করা হয়েছে ৮ লক্ষাধিক। এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ৫ লাখ। পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ৪ হাজারের বেশি। আটক হয়েছেন ১ লাখের বেশি। তবে আইনগতভাবে মুক্তি পাওয়ায় বর্তমানে সংখ্যাটি ৩০ হাজারের বেশি। সূত্র জানায়, দলটির ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজনও সক্রিয় হতে পারছেন না। জামায়াত নেতাদের ধারণা বিএনপি যতই হাঁক-ডাক দিক না কেন, আন্দোলন করে সহসাই সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। তাই অহেতুক আন্দোলন-কর্মসূচিতে সহিংসতা প্রদর্শন করে নতুন করে মামলা-হামলার মুখোমুখি হতে চায় না তারা। বরং গোপনে সংগঠনকে শক্তিশালী করাই শ্রেয়। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এ মুহূর্তে শক্ত কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে জামায়াত। তবে ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনে মাঠ ছাড়বে না তারা। দায়িত্বশীলারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য কার্যক্রম না থাকায় দলটির নেতা-কর্মীরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর, জেলা ও উপজেলাসহ সব কার্যালয় বন্ধ থাকার ফলে নেতা-কর্মীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। ফলে সংগঠনটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ খুবই অসুস্থ। ভারপ্রাপ্ত নতুন আমির কে হবেন এ নিয়েও চলছে ভাবনা। দেশে-বিদেশে থেকেও চাপে আছে জামায়াত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও পরাশক্তি দেশের সঙ্গে একসময় সু-সম্পর্ক ছিল। যেসব নেতা এসব সম্পর্ক রক্ষা করতেন তারা কারাগারে অথবা নিষ্ক্রিয় থাকায় ক‚টনীতিক সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। ঢাকা মহানগর জামায়াতের নেতা আবদুর রহমান বলেন, ‘হাজার হাজার কর্মী জেলে, অসংখ্য নিখোঁজ, ক্রসফায়ারে প্রাণ গেছে অনেক কর্মীর। আমরা আপাতত সংগঠন শক্তিশালী করার দিকেই নজর দিচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির দিক-নির্দেশনা রয়েছে। মাঠের কর্মীরা তা জানে।

 তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মোবাইলে যোগাযোগ করলে ট্রেকিং আতঙ্ক। সশরীরে আরও বিপদ। আটক, গ্রেফতার ও গুমের আশঙ্কা। ভাইবারেও বিশ্বাস নেই। কিছুতেই সংকট আমাদের পিছু ছাড়ছে না।’

সর্বশেষ খবর