শিরোনাম
সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গোয়েন্দাদের হাতে ভিডিও ফুটেজ

খুনিদের ধরতে বিশ্লেষণ চলছে, ডিবির দাবি আনসারুল্লাহ

সাখাওয়াত কাওসার ও ফরহাদ উদ্দীন

গোয়েন্দাদের হাতে ভিডিও ফুটেজ

রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে দিনদুপুরে হত্যা করা হয় প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এই তিন ভিডিও ফুটেজ নিয়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দারা। গত সাত দিনের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। যদিও গত রাত পর্যন্ত ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘাতকদের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি তারা। অন্যদিকে, হামলাকারীদের উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আহতদের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এর বাইরে লালমাটিয়ায় হামলার ঘটনায় বাড়ির দারোয়ান আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে লালমাটিয়ায় হত্যার চেষ্টা কিংবা ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। জানা গেছে, ঘটনার পরপরই ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দারা। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় ফুটেজ উদ্ধার করে র‌্যাব। সাত দিনের ওই ফুটেজের বিশ্লেষণ চলছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অনেক চেষ্টার পর অবশেষে সাত দিনের ফুটেজ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিট ফুটেজ সংগ্রহ করে। এদিকে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা এবং শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গোয়েন্দাদের সন্দেহের তীর জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দিকে। জঙ্গিদের স্লিপার সেলের সদস্যরা প্রায় একই সময়ে লালমাটিয়া এবং আজিজ সুপার মার্কেটে তাদের ওপর আক্রমণ করে। আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন সময় ধরপাকড়ের পরও এমন ঘটনা ঘটছে কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে শুধু জঙ্গিবাদ দমনের জন্য পুলিশের একটি বিশেষায়িত শাখা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

গতকাল লালমাটিয়া সি-ব্লকের ১৩/৮-এ এর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বাড়ির দিকে অনেক মানুষের দৃষ্টি। তবে চাপা আতঙ্ক আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদের মাঝে। এ বাড়িরই চারতলার বামদিকের ফ্ল্যাটে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, লেখক-ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গেলেও বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বেশ কিছু নতুন তথ্য। নিচতলার একজন বাসিন্দা জানালেন, শনিবার দুপুরে তিন যুবক ঢুকেই কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক দীপন হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মার্কেটের সব দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দুপুরে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বেলা ১২টায় দোকান বন্ধ করে কালো ব্যাজ ধারণ করে রাস্তায় সমাবেশ শুরু করেন আজিজ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এ সময় ‘কেন এমন হত্যা?’, ‘প্রকাশক দীপন হত্যার বিচার চাই’, ‘কেন এমন মৃত্যু?’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করে ব্যবসায়ীরা। সমাবেশে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান নাজু বলেন, রাষ্ট্রের বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দীপনের বাবাই বিচার চাননি। আমরা আর বিচার চেয়ে কী করব? আমরা চাই এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। সমিতির কোষাধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এরকম হত্যাকাণ্ড চলতে থাকলে দেশে জীবনের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। আমরা দীপনের বর্বর হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আর এমন হত্যাকাণ্ড যেন না হয় সেজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, ব্যবসায়ী অভিজিৎ চৌধুরী, সানাউল্লাহ শিশির, শাহাবুদ্দিন ফারুক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে যান ব্যবসায়ীরা। পরে তারা ফয়সালের নামাজে জানাজায় অংশ নেন। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। তবে একই মতাদর্শের লোকজন পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা।

উপুড় করে কোপানো হয় দীপনকে : জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে উপুড় করে ফেলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তার ঘাড়ে তিনটি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এর একটি ১১ ইঞ্চি দীর্ঘ ও চার ইঞ্চি গভীর। এ ছাড়া মাথার সামনে আরেকটি আঘাতের ক্ষত ও শরীরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ধারণা, দুর্বৃত্তরা দীপনকে জোর করে মাটিতে শুইয়ে দেওয়ার সময় তিনি বাধা দেন। ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী আবু শামা বলেন, ‘নিহত দীপনের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে হামলার পর ৫ মিনিটের বেশি বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।’ ফরেনসিক সূত্র জানায়, ময়নাতদন্তে দীপনের পাকস্থলীতে যে খাবার ছিল- সেই খাবার মৃত্যুর ঘণ্টা খানেক আগের। অর্থাৎ দুপুরে খাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে হত্যা করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, এর আগে যেসব ব্লগার খুন হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে তাদের সবারই শরীরের আঘাতের ধরন একই রকম। সবগুলো হত্যাকাণ্ডে চাপাতি জাতীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। দেখে মনে হয়েছে আক্রমণকারীদের টার্গেট থাকে ঘাড়।

 

সর্বশেষ খবর