বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দীপন হত্যা তদন্তে অগ্রগতি নেই

এবার বাবাকে খুনের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীপন হত্যা তদন্তে অগ্রগতি নেই

আবুল কাসেম ফজলুল হক

দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের জীবনও এখন ঝুঁকির মুখে। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন ঢাবির এই সাবেক শিক্ষক। এদিকে, তার ছেলে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার আসামিরা এখনো শনাক্ত হয়নি। তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। অন্ধকারেই রয়েছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। প্রকাশক, লেখক, ব্লগারসহ একের পর এক মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আজ কফিনমিছিল করবে গণজাগরণ মঞ্চ।

দীপনের বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িত ছিলাম। কখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি। এই প্রথম নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে হচ্ছে।’ দীপনের মা জানান, গতকাল বেলা ১১টায় দীপনের বাবার মোবাইলে একটি কল আসে। এ সময় ছেলের হত্যা নিয়ে তিনি যেন বাড়াবাড়ি না করেন, করলে পরিণতি ভালো হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ হুমকির বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ যদি আমাদের কাছে আসে তবে অভিযোগ করা হতে পারে। তবে আমরা হুমকির বিষয়টি আরও কিছু সময় দেখছি।’

এদিকে, দীপন হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা এখনো শনাক্ত হয়নি। গোয়েন্দা পুলিশসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ ও নীলাদ্রি নিলয়সহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দীপন হত্যাকাণ্ডের যথেষ্ট মিল রয়েছে। একই মতাদর্শের দুর্বৃত্তরাই দীপনকে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, তাদের অন্য একটি দল প্রায় একই সময়ে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের প্রকাশক টুটুলসহ তিনজনকে হত্যার চেষ্টা চালায়। যদিও তারা বেঁচে যান। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল তিনজন। আর মার্কেটের নিচতলায় তিনজন পাহারা দিচ্ছিল। কিলিং মিশন শেষ হওয়ার পর সরাসরি অংশ নেওয়া কিলার গ্রুপের সদস্যরা দ্রুত মার্কেট থেকে বের হয়ে যায়। দীপনের হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে আজিজ সুপার মার্কেটের সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, সব দিক বিচারে লালমাটিয়া ও শাহবাগের দুই হামলায় একই ধরনের জঙ্গি গ্রুপ অংশ নিয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই হয়তো দুর্বৃত্তরা অনুসরণ করেছিল দীপনকে। রেকি করেছিল শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট এবং লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের অফিসের অবস্থান। টুটুলসহ তিনজন যে বেঁচে যাবেন এমনটি হয়তো তারা কল্পনাও করেনি। সূত্র আরও জানায়, ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা এখন মূলত তাদের স্লিপার সেলের মাধ্যমে টার্গেট ব্যক্তিদের খুন করছে। তবে স্লিপার সেলের নেপথ্যে থেকে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। তবে দুর্বৃত্তদের তৎপরতা থেমে নেই। গোপনে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত গোয়েন্দারা।

বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিবেদক জানান, দীপন হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকালও মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। দুপুরে মার্কেটের ব্যবসায়ীবৃন্দ ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন। আজিজ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান নাজু বলেন, ‘আমরা চাই না আর এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হোক।’ শাহবাগে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা জঙ্গিগোষ্ঠীসহ সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার আহ্বান জানান। সমাবেশে প্রবীণ রাজনীতিবিদ অজয় রায় বলেন, ‘ওরা একের পর এক হত্যা হচ্ছে আমরা মিছিল-মিটিং করছি। এরপর কী। এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তারা যদি এ প্রশ্ন করেন তবে উত্তর দেব কী?’ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য বার বার আঘাত করা হচ্ছে। এদিকে, আজ কফিনমিছিল করবে গণজাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, বেলা ১১টায় ছয়জন ব্লগার হত্যার প্রতিবাদে ছয়টি কফিন এবং পরবর্তী টার্গেট কে- লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে গণজাগরণ মঞ্চ। কাল বিকাল ৩টায় শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করা হবে।

প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত : প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকালও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীপন হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট তিন দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল খোলা হয়েছে। দুপুরে মার্কেটের সকল ব্যবসায়ীবৃন্দ ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন। এ সময় আজিজ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান নাজু বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলেই আমরা সব ধরনের সহায়তা করব। আমরা চাই না আর এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হোক।’

এদিকে প্রকাশক দীপন হত্যা এবং শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদ রশীদ টুটুল, মুক্তমনা লেখক তারিক রহিম ও রণদীপন বসুকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চ। সমাবেশ থেকে বক্তারা জঙ্গিগোষ্ঠীসহ সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ অজয় রায়, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নূর আহমেদ বকুল, সংসদ সদস্য শিরীন আখতার প্রমুখ। অজয় রায় বলেন, ‘ওরা একের পর এক হত্যা করে যাচ্ছে আর আমরা দাঁড়িয়ে মিছিল মিটিং করছি। এরপর কী? এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, আত্মাহুতি দিয়েছেন, তারা যদি আমাদের এ প্রশ্ন করেন, তবে আমরা কী উত্তর দেব।’

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশে একের পর এক হত্যার মিছিল চলছে। একের পর এক মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য বারবার আঘাত করা হচ্ছে। আমরা তো হার মানার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’

 


সর্বশেষ খবর