বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেন গুলি করল না পুলিশ

সাভার প্রতিনিধি

আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া চেকপোস্টে গতকাল সকালে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করল শিল্পপুলিশের এক সদস্যকে। আহত করল দুইজনকে। কিন্তু এই পুলিশ সদস্যরা সশস্ত্র (বন্দুকধারী) হলেও তারা কেন গুলি করল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর আশুলিয়া থানা পুলিশের দল দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও কেন চেকপোস্টে ছিল না- প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেন, ‘পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলা হয়েছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ বাড়ইপাড়া চেকপোস্টে পুলিশের টহল দায়িত্ব শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। শিল্পপুলিশের পাঁচ সদস্য চেকপোস্টে গিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। কিন্তু আশুলিয়া থানা পুলিশের সাত সদস্যের একটি দলের ওই সময় চেকপোস্ট ডিউটি থাকলেও তারা তখনো যাননি। আর আগের দলটি তাদের জন্য অপেক্ষা না করেই চলে যায়। থানা পুলিশের দলটিতে মোট সাতজন সদস্য থাকার কথা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের দিকে চেকপোস্টে থাকা শিল্পপুলিশের সদস্যরা একসঙ্গে আসা দুটি মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করতে গেলে ছয় আরোহী মোটরসাইকেল থেকে নেমেই তাদের ব্যাগে থাকা চাপাতি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। দুই থেকে তিন মিনিটে তারা তাদের কোপানোর মিশন শেষ করে অস্ত্র ব্যাগে ভরে মোটরসাইকেলচেপে চন্দ্রার দিকে পালিয়ে যায়। পুলিশের দাবি, পালানোর সময় সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে যায়। এ হামলায় পুলিশ সদস্য মুকুল হোসেন ঘটনাস্থলে নিহত হন। তার ঘাড়ে-হাতে-পায়ে-পেটে অন্তত সাতটি কোপ দেওয়া হয়েছে। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, ‘হাসপাতালে আনার আগেই মুকুলের মৃত্যু হয়।’ চাপাতির কোপে আহত হয়েছেন নূরে আলম ও পিনাকুজ্জামান। বাকি দুই পুলিশ সদস্য দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ কনস্টেবল পিনাকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সবার হাতেই অস্ত্র ছিল, কিন্তু অনুমতি না থাকায় গুলি করিনি। আর দুজন সহকর্মী দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ায় হামলাকারী ছয় দুর্বৃত্তের সঙ্গে আমরা তিনজন পেরে উঠিনি। আশুলিয়া থানা পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে থাকলে এমনটা হতো না।’ এ ঘটনার পর নিহত এবং আহত পুলিশ সদস্যরা প্রায় ১০ মিনিটের মতো রাস্তায় পড়ে ছিলেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানদার আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে হঠাৎ ঘটনাটি ঘটে যায়। হামলাকারীরা দুটি মোটরসাইকেলে ছিল। একটি মেরুন ও আরেকটি কালো রঙের। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা পুলিশকে হামলা করে মোটরসাইকেলে চড়ে চলে যায়। পরে আমরাই পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। পুলিশ আসে আরও ৩০ মিনিট পর।’ আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহসিনুল কাদির অবশ্য দাবি করেন, ‘থানা পুলিশের দল চেকপোস্টে যেতে দেরি করেছে এটা ঠিক নয়। শিল্পপুলিশ আগেই চলে এসেছিল। আর ঘটনাটি ঘটে পালাবদলের সময়। পালাবদলের সময় ছিল সকাল ৮টা।’ তাহলে আগের পালার থানা পুলিশ কোথায় ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা ডিউটি শেষে চলে গিয়েছিল।’ ঢাকা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘এখানে দায়িত্বহীনতা স্পষ্ট। নতুন দল আসার আগেই থানা পুলিশের দল চেকপোস্ট ছেড়ে চলে যায়।’ ঢাকা জেলার এসপি হাবিবুর রহমান জানান, ‘পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আÍরক্ষার্থে বা জীবন বাঁচাতে পুলিশের গুলি করতে অনুমতি লাগে না। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।’ এদিকে, এ ঘটনায় অপরাধীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় নাসির ও সাখাওয়াত নামে দুই সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ।


এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর