শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপি নয়, চরম সংকটে সরকার

মাহমুদ আজহার

বিএনপি নয়, চরম সংকটে সরকার

নিতাই রায় চৌধুরী

বিএনপি নয়, ক্ষমতাসীন সরকারই চরম সংকটে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, দুই বিদেশিসহ দিবালোকে মুক্ত চিন্তার বেশ কয়েকজন সদস্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাই প্রমাণ করে, দেশে আইনের শাসন নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। এ ক্ষেত্রে সরকার শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতার  রেশ টানতে সরকার নানাভাবে বল প্রয়োগ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সরকার জরুরি। নইলে দেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে। আমরা আশা করি, শিগগিরই সরকার সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথেই হাঁটবে। রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ে নিজ চেম্বারে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে গত রবিবার খোলামেলা আলোচনায় এসব কথা বলেন বিএনপির এই সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনি বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই সরকারের পক্ষ থেকে আগাম মন্তব্যই প্রমাণ করে, তারা প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বিচারের মুখোমুখি করতে সাহস পাচ্ছেন না। দেশকে এক নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ক্রম অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য নিরঙ্কুশভাবে সরকার দায়ী। বিএনপিকে সংকটে ফেলতে দল ভাঙার ঘৃণ্য চক্রান্ত করছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এটা সরকারের পুরনো কৌশল। ইতিপূর্বে তাদের দল ভাঙার নাটক সফল হয়নি। ওয়ান ইলেভেনসহ বিভিন্ন সময় বিএনপি থেকে অনেকে বেরিয়ে গিয়েও সফল হননি। ভবিষ্যতেও যারা এ ধরনের অপতৎপরতা চালাবেন, তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, দলছুট নেতাকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সব সময় ঘৃণার চোখে দেখে। মনে রাখতে হবে, চাদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সে সূর্যের আলোয় আলোকিত। ঠিক তেমনই খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের আলোয় বিএনপি আলোকিত। জিয়া পরিবারকে বাইরে রেখে কেউ দল করতে চাইলে তা কখনোই আলোর মুখ দেখবে না।’ নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতি আজ চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি। তৈরি পোশাক খাতে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এতে গার্মেন্ট খাতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত তিন মাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রী এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের সার্বিক সংকটের একমাত্র পথই হচ্ছে সবার অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ  জাতীয় নির্বাচন। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। আর সেটা হতে পারে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমেই। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কার জরুরি। দলীয়করণ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে বের করে এনে যোগ্য ও দক্ষদের হাতে নেতৃত্ব দিতে হবে। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিএনপি একটি দুঃশাসন মোকাবিলা করে চলছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিএনপির পক্ষে। কিন্তু বিএনপির ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বিএনপিকে পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা। গ্রেফতার-হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছেন না। গুম-খুনের শিকার হাজার হাজার নেতা-কর্মী। এ অবস্থায়ও দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সাহসের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দল পুনর্গঠন প্রসঙ্গে নিতাই রায় বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সারা দেশে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। কোনো কোনো জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কারাগারে কিংবা গ্রেফতার এড়িয়ে চলছেন। ওইসব জেলায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সেখানেও সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো নেতা-কর্মীরা ফুঁসে উঠছে। আশা করছি, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর শিগগিরই কাউন্সিল হবে। দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবও হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে পুরনো ও নতুন নেতৃত্বের সমন্বয়ে বিএনপিকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী দলে রূপান্তরিত করা হবে। বিএনপি একটি অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় জাতীয় স্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। শত বাধা ও দুঃসময় অতিক্রম করে অভ্যস্ত শহীদ জিয়ার দল। এটা প্রমাণ হবে, যদি দেশে একটি সত্যিকারার্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমার মনে হয়, সংকট বা দুঃসময় বলতে যদি কিছু থাকে তা সরকার ও আওয়ামী লীগে। সরকারই উদ্বিগ্ন ও অস্থির হওয়ার কথা, যদি না তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর