বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পুলিশ পাহারায় মিলাদ করলেন জিয়ার ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশ পাহারায় মিলাদ করলেন জিয়ার ভাই

দুপুরের পরপরই গতকাল রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখ করার মতো।  বেলা আড়াইটার মধ্যে গণমাধ্যম কর্মীরাও এসে জড়ো হন সেখানে। একটি মিলাদ মাহফিলকে ঘিরেই মূলত সবার উৎসুক দৃষ্টি ছিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের দিকে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ মিলাদ মাহফিলকে ঘিরে ছিল নানা কৌত‚হল। পরিবারের মরহুম সদস্যদের স্মরণে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামাল এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

বেলা ২টার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মিলাদ মাহফিলের কর্মসূচি শুরু হয়। বিকাল ৪টার মধ্যেই কর্মসূচি শেষ হয়। এতে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীকেই দেখা যায়নি। মিলাদ উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে পুলিশ তল্লাশি চৌকি বসায়। ভিতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকের সদস্যদেরও ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। অনুষ্ঠান শেষে যাওয়ার পথেও আহমেদ কামালকে পুলিশ সহায়তা করে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত রমনা থানার এক উপ-পরিদর্শক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কোনো কর্মসূচি হলেই তারা বাড়তি নিরাপত্তা দেন। এর বাইরে অন্য কোনো কিছু নয়।’ মিলাদ অনুষ্ঠানে মঞ্চে আহমেদ কামাল চেয়ারে বসে অংশ নেন। মঞ্চের পেছনে একটি ব্যানার ছিল, তাতে তার বাবা মনছুর রহমান, মা জাহানারা খাতুন, বড় ভাই রেজাউর রহমান, মেজো ভাই জিয়াউর রহমান, সেজো ভাই মিজানুর রহমান, ছোট ভাই খলিলুর রহমান এবং জিয়ার  ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ছবি ছিল। আহমেদ কামালের ছবিও ছিল ব্যানারে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের নিচ তলায় শতাধিক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মঞ্চে বসা ফেরদৌস আলম ও মাহবুব আলম নামে দুজন আহমেদ কামালের চাচাতো ভাই বলে দাবি করেন। এ ছাড়া দর্শক সারিতে জিয়াউর রহমানের খালাতো বোন তহুরা মোজাফফরকে বসে থাকতে দেখা যায়। আর বাকিরা ছিল অপরিচিত মুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আহমেদ কামালের ভাতিজা হিসেবে খ্যাত শরিফুল আলম ডন। তবে তিনি খালেদা জিয়ার দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। দোয়া মাহফিলের পর মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হয়।

মিলাদ মাহফিলে লিখিত বক্তব্যে আহমেদ কামাল বলেন, ‘এটা একান্তই আমাদের পরিবারের মরহুম সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য পারিবারিক মিলাদ মাহফিল। বিষয়টিকে অন্যভাবে না দেখার জন্য অনুরোধ করছি। তবে যদি কোনো দিন রাজনীতিতে আসি, আপনাদের সবাইকে জানিয়েই আসব।’ চলমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যে গণতন্ত্রের কথা বলছে, এটা গণতন্ত্র নয়। এখন এক নায়কতন্ত্র চলছে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের মঙ্গলের জন্য সঠিক ও সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ আহমেদ কামাল তার মরহুম পিতা মনছুর রহমান, মাতা জাহানারা খাতুন, ভাই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মিজানুর রহমান, খলিলুর রহমান ও ভাতিজা আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাতের পাশাপাশি দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করেন। আহমেদ কামাল বলেন, ‘আমি বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সুধী সমাজকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অনেকের ঠিকানা ও ফোন নম্বর না পাওয়ায় দাওয়াত দিতে পারিনি। সে জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। মিলাদ মাহফিলের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মিলাদ মাহফিলের পেছনে ছোট একটা তাগিদ বোধ করছিলাম। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম। দেশবাসীর দোয়ায় আল্লাহপাকের ইচ্ছাই আমি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছি। এ জন্য দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি।’ মিলাদে আগত অধিকাংশই ছিলেন যুবক। কয়েকজন নারীকেও উপস্থিত হতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আসা সবুজ নামের এক যুবক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক বড় ভাই তাকে মিলাদে আসতে বলেছেন।’

টঙ্গী থেকে আসা শরীফ নামের আরেক যুবক বলেন, টঙ্গী থেকে বেশ কয়েকজন লোককে মিলাদে আসতে বলা হয়েছে। তিনিও তাদের একজন ছিলেন। মালিবাগ থেকে আসা আরেক যুবক বলেন, আগে থেকেই জানতাম এখানে একটি মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। তাই এসেছি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম রোড, ডেমরা, মাতুয়াইলসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে এসব অপরিচিত লোকজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

 

 

সর্বশেষ খবর