শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কূলকিনারা হলো না পুলিশ হত্যার, মামলা দায়ের

নাজমুল হুদা, সাভার

কূলকিনারা হলো না পুলিশ হত্যার, মামলা দায়ের

তল্লাশি চৌকিতে কনস্টেবল হত্যা

সাভারের আশুলিয়ায় তল্লাশি চৌকিতে কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যার কূলকিনারা হয়নি। হত্যাকারীদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্বরত পাঁচ পুলিশের ওপর হামলা চালায় দুই দুর্বৃত্ত। এরা এসেছিল মোটরসাইকেলে করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া এমন তথ্য নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ আশুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে। এদিকে গত রাতে র‌্যাব-প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেন, আশুলিয়ায় পুলিশ খুনের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ‘দাওয়াতুল ইসলাম’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠন সম্পর্কে তারা তদন্ত করে দেখছেন।

এদিকে পুলিশ হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে গতকাল সকালে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন থানার এসআই আজাহারুল ইসলাম। মামলা নম্বর ৮। এ ছাড়া ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাড়ইপাড়ায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা এবং একজনকে জখম করে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই এলাকায় দায়িত্বরত শিল্পপুলিশ-১-এর উপপরিচালক কাওসার শিকদারের দাবি, অস্ত্র ছিনতাই করতে না পেরে কনস্টেবল মুকুল হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে হামলাকারীরা। তবে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, তল্লাশি চৌকিতে মোটরসাইকেলটি থামানোর পরপরই আরোহীরা ছুরি-চাপাতি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

আলামত সংগ্রহে সিআইডি: হামলার কয়েক ঘণ্টা পর বাড়ইপাড়ার পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে গিয়ে দেখা যায় ছোপ ছোপ রক্ত। বিনোদন কেন্দ্র নন্দন পার্কের প্রধান ফটকের সামনের এ স্থানটি দিনের বেলায় সরগরম থাকলেও সকালে সে রকম অবস্থা থাকে না, রাতে এলাকাটি থাকে সুনসান। সেখানে ছিনতাই ঠেকাতে কয়েক মাস ধরে আশুলিয়া থানা পুলিশ রাতে-দিনে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে সন্দেহজনক যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এর আশপাশের আধা কিলোমিটারের মধ্যে জনবসতি বেশ কম। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ২০০ গজ পূর্ব পাশে কয়েকটি ঘর রয়েছে গজারিবনের ভিতরে। সেখানে বিভিন্ন শ্রমিক থাকেন। হাসপাতালে নেওয়া হলে মুকুলের মৃত্যু হয়। তল্লাশি চৌকিতে কর্তব্যরত বাকি তিন পুলিশ কনস্টেবলও আহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি মোটর সাইকেলে করে এসে দুজন দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, একটি মোটরসাইকেলে চড়ে কালিয়াকৈরের দিক থেকে আসা দুই যুবক হামলা চালিয়েছিল। কনক দাশ জানান, ‘চেকপোস্টের কাছে মোটরসাইকেলটি এসে থামে। মোটরসাইকেলটি থামার পর পুলিশ এর কাছে যাওয়া মাত্র ওই দুই যুবক কনস্টেবল মুকুল ও নুর আলমকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আহত অবস্থায় ওই দুই পুলিশ সদস্য দৌড়ে মহাসড়কের পাশের শুভেচ্ছা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়েও তাদের কোপায় দুই যুবক। এরপর তারা গজারিবনের ভিতরে ঢুকে পড়েন। তখন ভয়ে আমি সেখান থেকে চলে আসি।’

হামলাকারী ২, পুলিশ ৫ : তল্লাশি চৌকিতে হামলার সময় পাঁচজন সশস্ত্র কনস্টেবল থাকলেও দুজনের হামলায় তারা কুপোকাত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেছেন, কনস্টেবল মুকুল ও নুর আক্রান্ত হলে তার অন্য তিন সহকর্মী পালিয়ে যান গজারিবনের দিকে। তখন একজন ড্রেনে পড়ে আহতও হন। স্থানীয়রাই একটি রিকশা ভ্যানে করে কনস্টেবল মুকুল ও নুরকে কাছের ফাতেমা ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখান থেকে আশুলিয়া থানা পুলিশ ও শিল্পপুলিশ অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুকুলকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা বলছেন, সহকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে দুই কনস্টেবলকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মুকুলকে বাঁচানো যেত।

নিহত পুলিশ মুকুলের বগুড়ায় দাফন সম্পন্ন : আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানান, ঢাকার আশুলিয়ায় দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত শিল্পপুলিশের সদস্য মুকুল হোসেনের দাফন বগুড়ায় তার নিজ গ্রামে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের রহবল দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পূর্বপাড়া গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর