শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের

জিন্নাতুন নূর

পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের

ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন

সরকার জঙ্গি দমন ইস্যুতে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও তাদের দমনে কিছুই করতে পারছে না। দেশে জঙ্গিবাদ বেড়েই চলছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের। বর্তমান পরিস্থিতি সরকার যেভাবে মোকাবিলা করতে চাচ্ছে তাতে কিছু হবে বলে আমি মনে করি না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভালো নেই এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দেশে ‘এলার্মিং’ পরিস্থিতি না হলেও এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলা যায়। আর এভাবে চলতে থাকলে দেশ কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানি না। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ, জাতীয় ঐকমত্যসহ জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পেছনের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যারা একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। কারণ যারা ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তারা বাইরের কেউ নয়। তারা এই সমাজেরই। আর এই মানুষগুলো নিজেদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করছে বলেই তারা দেশকে অশান্ত করে তুলছে। সরকারকে এখন এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে এবং এ বিষয়ে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। তা না হলে ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা চলতেই থাকবে। সরকার যে অ্যাপ্রোচ নিয়ে জঙ্গি দমন করছে তাতে কাজ হবে না। এ জন্য দরকার সামাজিক আন্দোলন। এ বিষয়ে দেশের সবাইকেই সম্পৃক্ত করতে হবে। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশে যত দিন পর্যন্ত একটি ‘পলিটিক্যাল স্টেজ’ তৈরি না হবে তত দিন দেশ এই অসহিষ্ণু অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না। আর সরকারকেও ‘উটপাখির’ মতো কোনো কিছু হয়নি এমন ভাব নিয়ে থাকলে চলবে না। এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে হবে।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, দেশে আইএস আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু আইএস-এর সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত কয়েকজনের নামে এরই মধ্যে চার্জশিট তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এরা কারা? আশঙ্কার বিষয় এই যে, বাংলাদেশ আইএস-এর সদস্যদের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান। আমরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশ। এই দেশ থেকে অনেক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করতে যাচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশে আইএস-এর সদস্যদের থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ জন্য দেশে আইএস নেই এমনটি মনে করে চোখ বন্ধ করে থাকলেও চলবে না।  সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কওমি মাদ্রাসায় যারা পড়ছেন তাদের নিয়ে সমাজ এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে। এমনকি তাদের সমাজ থেকে আলাদা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ যাদের সমাজ থেকে আলাদা করার চিন্তা-ভাবনা চলছে তাদের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। ফলে সমাজে এক ধরনের বিভাজন তৈরি হচ্ছে। আমরা অনেকেই ধর্ম-নিরপেক্ষ শব্দটি ব্যবহার করছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ এখনো ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝানো হয় তা জানেন না। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ এসব বুঝেন না। এ জন্য যারা ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নিচ্ছেন তাদের প্রতিও আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। কারণ আমরা এদের সমাজ থেকে বের করে দিতে পারি না। দুঃখজনক হলেও পুলিশ সদস্যরা মুখে দাড়ি দেখলেই মানুষকে জঙ্গি ভেবে গ্রেফতার করেন।  তেমনি যারা মুক্তমনা ব্লগে ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করছেন তাদের স্পর্শকাতর বিষয় সম্পর্কে লেখতে গিয়ে আরও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।

সর্বশেষ খবর