শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফের দুই বিদেশির ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের দুই বিদেশির ওপর হামলা

দুর্বৃত্তদের হামলায় এবার নিজ ফ্ল্যাটে আহত হয়েছেন তাইওয়ানি দম্পতি। রাজধানীর উত্তরার ফ্ল্যাটে ঢুকে দুর্বৃত্তরা এ ব্যবসায়ী দম্পতিকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। আলমারি থেকে লুটে নেয় নগদ ৬ লাখ টাকা। পরে আহত অবস্থায় দুজনকেই এ্যাপোলো হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন ওয়াং মি চি (৬৫) ও তার স্ত্রী লাই লি হুয়া (৪৮)। তাদের মধ্যে ওয়াং মি চির আঘাত গুরুতর। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। লাই লি হুয়াকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৪/এ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসার তিন তলার একটি ফ্ল্যাটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ হামলাকারীদের একজন জাহাঙ্গীরকে আটক করেছে। হামলাকারী অন্য দুজনকে খুঁজছে। পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজারকে। এর তিন দিনের মাথায় রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও। এ দুই খুন নিয়ে যখন সারা দেশে তোলপাড় চলছে, ঠিক তখনই রাজধানীর উত্তরায় তাইওয়ানের দুই নাগরিকের ওপর হামলা হলো। পুলিশ জানায়, তাইওয়ানের এ দম্পতি ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে প্লাইউডের ব্যবসা করছেন। গাজীপুরের বড়বাড়ী এলাকায় জিং জিন ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল নামে তাদের একটি প্লাইউডের কারখানা রয়েছে। এ কারখানায় পিভিসি ডোর ও সিলিং তৈরি করা হয়। ওয়াং মি চি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর তার স্ত্রী লাই লি হুয়া পরিচালক।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ২টা ২২ মিনিটে তাইওয়ানের ওই দুই নাগরিককে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তাদের জরুরি বিভাগের মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। প্রথমে দুজনকেই আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। লাই লি হুয়ার অবস্থা ভালো হলে তাকে ৭২০৩ নম্বর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। তবে ওয়াং মি চিকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা চিন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, তাদের মাথা ও ঘাড়ে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করার চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লাঠি বা হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলেই চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি নিউরো বিভাগের ডা. আলিমুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুলিশ জানায়, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৪/এ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন ওই দম্পতি। ওই বাসার নিচতলা ও দোতলায় তাদের কারখানার প্রধান অফিস। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের এএসআই ইকবাল হোসেন জানান, বিদেশি নাগরিক হওয়ায় কারখানা থেকেই তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছিল। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা ঢাকার বাসার উদ্দেশে কারখানা থেকে বের হন। পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিধান চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, রাত পৌনে ১টার দিকে নকল চাবি দিয়ে বাসার দরজা খুলে তিন দুর্বৃত্ত ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় বাসার ভিতর থেকে ওয়াং মি চি ও তার স্ত্রী বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। দুর্বৃত্তরা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে লাঠি বা হকিস্টিক দিয়ে তাদের ওপর এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তারা মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে বাসায় রাখা ৬ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তারা ৬ লাখ টাকা বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন। ঢাকার প্রধান অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্যই ওই টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। টাকা বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় রাখার বিষয়টি তাদের অফিসের একজন কর্মচারী জানতেন। পুলিশের কাছে এ দম্পতি জানান, হামলার সময় দুর্বৃত্তদের সঙ্গে তাদের কর্মচারী জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন। এ তথ্য পাওয়ার পর শুক্রবার সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়। জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে হামলায় তার দুই সহযোগীর নাম পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, হামলার সময় রাজু ও সাজু নামে দুই কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। তবে পুলিশ রাজু ও সাজুকে আটক করতে পারেনি। কারখানার ব্যবস্থাপক (জিএম) শামির হাসিব বলছেন, ওই দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ক্ষত দেখে তার মনে হয়েছে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লাঠি বা হকিস্টিক দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। উত্তরা মডেল থানার ওসি জানিয়েছেন, বিদেশি নাগরিকের ওপর হামলার ঘটনায় তাদের কারখানার ব্যবস্থাপক শামির হাসিব বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার ডিসি মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, আটক জাহাঙ্গীর একসময় তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ীর কর্মচারী ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি ওই কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহের কাজ শুরু করেন। সে কারণে ওয়াং মি চির উত্তরার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। তার কাছে ওই বাসার একটি চাবিও ছিল। ব্যবসার টাকা-পয়সা বকেয়া নিয়ে কিছু দিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন খবর পেয়ে জাহাঙ্গীর তার আরও দুই সহযোগীকে নিয়ে উত্তরার বাসায় যান। এরপর দম্পতিকে মারধর করে ৬ লাখ টাকা নিয়ে চলে যান। পরে জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর