শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তদন্তে কোনো কিছুই হলো না

বিদেশি নাগরিক, ব্লগার ও পুলিশ হত্যা

সাখাওয়াত কাওসার

ঘটেই চলেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বিদেশি নাগরিক, সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় নেতা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্য- বাদ যাচ্ছে না কেউই। হামলা হয়েছে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিল প্রস্তুতিস্থলেও। ঠেকানো যাচ্ছে না দুর্বৃত্তদের। তবে বহুল আলোচিত এসব ঘটনার তদন্তে তেমন একটা অগ্রগতি নেই। অধিকাংশ ঘটনার তদন্ত নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা এখনো রীতিমতো অন্ধকারেই ঢিল ছুড়ছেন। পুরান ঢাকার হোসনি দালানে হামলা, শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক দীপন ও সর্বশেষ আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যার মতো ঘটনাগুলো এখনো অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত কাজ এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ১৩ দিনের মাথায় দুই দফা হামলা চালিয়ে পুলিশ খুনের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে, ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার, জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যায় গ্রেফতারকৃতের স্বজনরা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করেছেন। তারা বলছেন, স্বজনদের ফাঁসানো হয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার রাসেল চৌধুরীর মা আফরোজা বেগমের দাবি, তার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। একই বক্তব্য হোশি কোনিও হত্যায় গ্রেফতারকৃতদের স্বজনদেরও। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, প্রতিটি ঘটনাকেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সর্বশেষ পুলিশ খুনের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তাধীন ঘটনায় কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে সময়মতো সবকিছুই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। পুলিশের ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত নয়, বরং নতুন উদ্যমে কাজ করছেন। এদিকে, গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য একটি চক্র দীর্ঘদিন চেষ্টা করে আসছে। এ চক্রের অনেক প্রভাবশালী সদস্যই দেশের বাইরে অবস্থান করছে। দেশের তাদের অনুসারীদের মাধ্যমেই একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার। এর ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও। ৫ অক্টোবর বাড্ডায় খুন হন ধর্মীয় নেতা ও প্রকৌশলী খিজির খান। ২২ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গাবতলীর চেকপোস্টে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন সহকারী উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম মোল্লা। একদিন পরেই চানখাঁরপুল হোসেনি দালানের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মারা যান দুজন। ৩১ অক্টোবর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে নিজ অফিসে খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন। প্রায় একই সময়ে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের অফিসে ঢুকে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুলি করে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ ৪ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া বারইপাড়া চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে এক পুলিশকে খুন ও একজনকে আহত করে দুর্বৃত্তরা। একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গাড়িতে গুলির ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। ভবিষ্যতে এসব ঘটনা ঠেকানো সম্ভব না হলে দেশকে বাজে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে বলে জানান তারা। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অবশ্যই কিছুটা গাফিলতি রয়েছে। নইলে একের পর এক ঘটনা ঘটবে কেন? তবে তাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে ওঠা উচিত। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা ঘটনার রহস্য উন্মোচন করবে। সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে না এ কথা ঠিক নয়। তাভেলা হত্যা রহস্য আমরা উন্মোচিত করেছি। পাঁচ গ্রেফতারকৃতের চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। খিজির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গাবতলীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, হোসেনি দালানে হামলা এবং দীপন হত্যা নিয়ে কাজ চলছে। প্রযুক্তির পাশাপাশি, বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করে তদন্তকাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর