শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিচার হয়নি পুলিশ হত্যারও

আলী আজম

দুর্বৃত্তদের হামলায় পুলিশ খুন হয়। সেই খুনের মামলার তদন্ত করে পুলিশ নিজেই। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, পুলিশের তদন্তে পুলিশ খুনের বিচার হয় না। গত আড়াই বছরে সংঘটিত ২১ পুলিশ হত্যার মধ্যে বিচার হয়নি একটিরও।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে খুন হন ১৪ পুলিশ সদস্য, গত বছর তিনজন আর চলতি বছরে চারজন পুলিশ সদস্য খুন হয়েছেন। এতগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত  হত্যা মামলাগুলোর তদন্তে তেমন অগ্রগতি নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হরতাল ও অবরোধের দায়িত্ব পালনের সময় দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমায় রাজধানীতে নিহত হন কনস্টেবল মো. শামীম মিয়া। ২৩ জুলাই কক্সবাজারে ছিনতাইকারীদের ধরতে গিয়ে খুন হন কনস্টেবল পারভেজ। ২২ অক্টোবর দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গাবতলী সেতুর কাছে পর্বত সিনেমা হলের সামনে পুলিশের একটি চেকপোস্টে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা নিহত হন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে একটি চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনের সময় দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের হামলায় নিহত হন কনস্টেবল মুকুল হোসেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে। কিন্তু পুলিশের মামলাই পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের ঘটনায় দায়ের করা অনেক হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নাশকতায় পুলিশ নিহত হওয়ার কোনো মামলা এখন পর্যন্ত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়নি বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর মতিঝিলে ২০১৩ সালের ৬ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হামলায় এসআই শাহজাহানের মৃত্যুর ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা হয়। সে মামলার এখনো তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার ওসি বি এম ফরমান আলী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায় চার পুলিশ সদস্য নিহত হন। দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তের পর ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২৩৫ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া ওই চার্জশিটে এজাহারভুক্ত ৮৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ১৪৬ জন আসামি। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা লোহাগাড়ার জমির কমপ্লেক্সে আগুন দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং মাথায় লোহার খন্তা ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পুলিশ কনস্টেবল আবু তারেক আরিফকে। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়ার কাঞ্চনায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের তাণ্ডবের সময় গুলিবিদ্ধ হন পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইকবাল। এগুলোর বিচার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে সড়কপথে ময়মনসিংহের আদালতে প্রিজন ভ্যানযোগে নিয়ে আসার সময় পথের মাঝখানে ফিল্মিস্টাইলে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিদের দল। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় জঙ্গিদের গুলিতে আতিকুল ইসলাম (২৯) নামের এক পুলিশ কনস্টেবল ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় ওই দিনই ত্রিশাল থানায় পৃথক মামলা হয়। পরবর্তীতে এ মামলা সিআইডিতে পাঠানো হয়। কিন্তু অগ্রগতি নেই। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ চত্বরে জামায়াত-শিবিরের হামলায় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল ওমর ফারুক নিহত হন। ঘটনার প্রায় এক বছর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মহিবুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মোতাহার হোসেনসহ ৩৮৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন। চার্জশিটভুক্ত ২৭৫ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজশাহী নগরীর ভুবনমোহন পার্কে ১৮-দলীয় জোটের সমাবেশের পর নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় তাদের ছোড়া বোমার আঘাতে পুলিশের অন্তত ১০ সদস্য গুরুতর আহত হন। পরে আহতদের এক কনস্টেবল সিদ্ধার্থ ঢাকা সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জানা যায়, এ ঘটনায় হওয়া মামলাটি বর্তমানে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

এর মধ্যে হত্যা মামলাটির পরবর্তী তারিখ হলো ২২ নভেম্বর এবং বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্রের শুনানির দিন হলো আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর