শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সরকারের ভিতর সুশাসন পরিপন্থীরা ঢুকে গেছে

লাকমিনা জেসমিন সোমা

সরকারের ভিতর সুশাসন পরিপন্থীরা ঢুকে গেছে

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার তার নীতিতে ঠিক আছে, কিন্তু তারা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি ‘সরকারের ভিতর সুশাসন পরিপন্থীরা ঢুকে গেছে’ বলে মন্তব্য করেন। গতকাল চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অনাকাক্সিক্ষত বলব না। কারণ, যে ইতিহাস ও ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে এর বিকল্প কিছু ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে স্বাভাবিকভাবেই কথা ছিল স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিই রাজনীতি করবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যারা পাকিস্তানের দর্শনে বিশ্বাসী; অর্থাৎ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারাও এখানে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। পাকিস্তানের টাকায় রাজনীতি করে পাকিস্তানি ঘরানার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষের এবং বিপক্ষের শক্তি একসঙ্গে রাজনীতি করতে পারে না। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে কিংবা যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারাই এখানে রাজনীতি করবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট এই গবেষক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তার রাজনৈতিক নীতি কিংবা দর্শনে ঠিক আছে। কিন্তু সহযোগিতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতার অভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। তাদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ঢুকে গেছে। প্রবেশ করেছেন জামায়াত নেতারাও। কারা সহযোগিতা করছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় গঠিত সরকারের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানই এর মধ্যে পড়ে। সিভিল সার্ভিস কিংবা পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি প্রবেশ করে সরকারকে অসহযোগিতা করছে। নিজেদের দলের মধ্যেও সুশাসন পরিপন্থীরা ঢুকে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাম্প্রতিক একের পর এক ব্লগার, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ হত্যার মূল হোতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অদক্ষতাই এর মূল কারণ হতে পারে। এর পেছনে প্রধান দুই দলের দোষারোপের রাজনীতি দায়ী কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তা মনে করি না। কেননা, যে যাই বলুক, যাকেই দোষারোপ করুক, একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করবে তার নিজের নীতিতে। আইনশৃঙ্খলার মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কোনো রাজনৈতিক নেতার কথার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ নেই। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই নাগরিক। তিনি বলেন, কেবল সরকার সচেষ্ট হলেই চলবে না, এ ক্ষেত্রে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর তার জন্য এ মুহূর্তে দরকার বৃহৎ পরিসরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এটি করতে তথাকথিত সিভিল সোসাইটি নয়, বরং যাদের সমাজের মানুষ সত্যিকারের সম্মান করে, যাদের কথা মানুষ শোনে, যাদের মানে বা বিশ্বাস করে তাদেরই এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে। ড. দেবপ্রিয় মনে করেন, সন্ত্রাসী দমন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সোচ্চার হতে হবে। তাদের আরও শক্তিশালী করতে সরকারকেও আরও বিধিবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি তুলনামূলকভাবে পুলিশের চেয়ে র‌্যাব অনেকটা দক্ষ ও শক্তিশালী। পুলিশকেও এ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিধি অনুসারে তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণব্যবস্থা বা আরও কী করলে এ বিভাগটির প্রশাসনিক উন্নয়ন ও কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি তাদের নিজেদের সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে এক ধরনের দায়বদ্ধতার জায়গা সৃষ্টি করতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে সরকার যতই পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুক, তাদের সচেতনতা বা ইচ্ছা না থাকলে তা কোনো কার্যকর ফল বয়ে আনবে না। তবে চলমান সংকট একদিন কেটে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, যেহেতু বর্তমানে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায়, সুতরাং ধীরগতিতে হলেও এ অবস্থার উন্নতি হবে।

সর্বশেষ খবর