রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খালেদার দেশে ফেরা না ফেরা

মাহমুদ আজহার

খালেদার দেশে ফেরা না ফেরা

লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা না ফেরা নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ বইছে। প্রধান দুই দলে এ নিয়ে নানা মন্তব্য করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষক মহলে সৃষ্টি হয়েছে নানা কৌতূহল। দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীরা অধীর আগ্রহে বেগম জিয়ার দেশে ফেরার অপেক্ষা করছেন। তার অনুপস্থিতিতে তৃণমূলে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়ও কিছুটা ভাটা পড়েছে। অন্তত ২০টি জেলা কাউন্সিল উপযোগী থাকলেও বিএনপি-প্রধানের সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিনের বুকিং বাতিল করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর তার ঢাকায় ফেরার আরেকটি সম্ভাবনার কথা জানায় লন্ডন বিএনপি। সে অনুযায়ী তার টিকিট বুকিং দেওয়া হয়েছে। তবে তা-ও চূড়ান্ত নয় বলে জানা গেছে। লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়া কবে ফিরবেন- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি, কখন আমাদের চেয়ারপারসন চিকিৎসা শেষ করে সুস্থভাবে দেশে ফিরবেন। আশা করছি শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন।’ তবে গতকাল এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা খুব শিগগিরই শেষ হবে। এতে কী হবে খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন। তাই তিনি দেশে ফিরবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে।’ জানা যায়, চলতি মাসেও খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবার টিকিট বুকিং দিয়ে দেশে ফেরেননি বিএনপি-প্রধান। কেউ কেউ বলছেন, আগামী মাসের শুরুতেও দেশে ফিরতে পারেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তবে তার ফেরা নিয়ে দিনক্ষণ কোনোটাই চূড়ান্ত নয়। সূত্রমতে, দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ পরিকল্পনা করছেন বেগম জিয়া। আগামী দিনে সাংগঠনিক কাঠামোয় কাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া যায়, সে ব্যাপারেও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর আন্দোলনে কারা কারা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তা নিয়েও মা-ছেলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এ কারণেই তার দেশে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে। আরেক সূত্র জানায়, ১৩ নভেম্বর লন্ডনে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার কোনো প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকও হতে পারে। বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদির অবস্থান জেনেই বেগম জিয়া ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। এ কারণেই তার লন্ডনে এ অপেক্ষা বলে জানা যায়। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া ১০ নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরবেন। লন্ডন বিএনপি বলছে, ১০ নভেম্বর দেশে ফিরছেন না বেগম জিয়া। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে অধীর আগ্রহে দলের নেতা-কর্মীরা। তার দেশে ফেরায় বিলম্ব হওয়ার কারণ খুঁজছেন তারা। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের অনেকেই লন্ডনে কিংবা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টদের কাছেও এ নিয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করছেন অনেকেই।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা উচিত। নইলে বিএনপিকে নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্র আরও বাড়বে। শমসের মবিনের মতো আরও কিছু নেতা দল ছাড়তে পারেন। আবার দল ভাঙার প্রক্রিয়ায়ও জড়িত হতে পারেন অনেকে। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বশূন্যতাও চলছে। সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে জেলে পাঠানো হয়েছে। সারা দেশেই গ্রেফতার অভিযান চলছে। নানা কারণে বিএনপিতে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাই বেগম জিয়া যত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরবেন, ততই দলের জন্য ভালো বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। ১৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেখানে তার এক চোখে অস্ত্রোপচারও হয়। এ ছাড়া পায়ের পরীক্ষাও করান তিনি। ৪ নভেম্বর চিকিৎসক তার চোখের সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। নতুন করে আর কোনো চিকিৎসা করাবেন না বেগম জিয়া। এদিকে লন্ডনে খালেদা জিয়া ঘরোয়াভাবে গতকাল ৭ নভেম্বরের কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানা গেছে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর