রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওয়াং চির

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেই তাইওয়ান দম্পতির ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য তাইওয়ানি দম্পতির ওপর হামলা চালানো হয়। এতে কোনো জঙ্গিসম্পৃক্ততা নেই। ডিবি পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম গতকাল এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, সাইট ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গেও এ ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে  পাওয়া যায়নি। হামলার ঘটনায় আটক জাহাঙ্গীরকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। ঘটনার দিন রাজু ও সাজুকে নিয়ে তারা তিনজন তাইওয়ানি দম্পতির ওপর হামলা চালান বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় রাজু ও সাজুকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে তাইওয়ানি দম্পতির মধ্যে স্বামী ওয়াং মি চির জ্ঞান এখনো ফেরেনি। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তার স্ত্রী লাই লি হুয়ার অবস্থা উন্নতির দিকে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে তাইওয়ানের দম্পতি ওয়াং মি চি ও তার স্ত্রী লাই লি হুয়া হামলার শিকার হন। তাদের রাত ২টা ২২ মিনিটে এ্যাপোলো হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে দুজনকেই আইসিইউতে রাখা হয়। লাই লি হুয়ার অবস্থা ভালো হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে ওয়াংকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ্যাপোলো হসপিটালের ডিউটি ম্যানেজার মফিদুল ইসলাম গতকাল তাদের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা করে বলেন, ওয়াং মি চির মাথা ও ঘাড়ে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লাঠি বা হকিস্টিক দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়েছিল। মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলেই তার অবস্থা গুরুতর। নিউরো বিভাগের ডা. আলিমুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। তবে তার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। এদিকে ওই দম্পতির প্রতিষ্ঠান জিং জিং ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের মহাব্যবস্থাপক সামির হাসিব গতকাল সকালে বলেন, এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে একটি মামলা করেন। ঘটনার সময় ওয়াং ও লাই লি দম্পতি যে দুজনকে চিনতে পেরেছিলেন তারা এখনো গ্রেফতার হননি। তিনি আরও বলেন, বিমানের টিকিট না পাওয়ায় ওয়াং ও লাই লি হুয়া দম্পতির ছেলেমেয়েরা এখনো বাংলাদেশে আসতে পারেননি। তবে সন্ধ্যার (শনিবার) মধ্যেই তাদের আসার কথা রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় হামলাকারী সন্দেহে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আহত দম্পতি সুস্থ হলে অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর ওই দম্পতির সাবেক কর্মচারী। রাজু ও সাজু গাজীপুরের গাছা এলাকায় জিং জিং ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির কারখানায় তৈরি পিভিসি ডোর ও সিলিংয়ের প্রিন্টিংয়ের কাজ করতেন। টাকা লুট করার উদ্দেশ্যেই তিনজন তাইওয়ান নাগরিক দম্পতির ওপর হামলা চালান। জাহাঙ্গীরকে গতকাল ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন উত্তরা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন। শুনানি শেষে বিচারক এমদাদুল হক তিন দিন মঞ্জুর করেন। গতকাল উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টরের ১৪/এ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসায় গিয়ে জানা গেছে, বাড়িটিতে কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিল না। কাল নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কথা হয় নতুন নিরাপত্তাকর্মী হুমায়ুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই প্রথম নিরাপত্তার জন্য লোক রাখা হয়েছে। বাড়িতে যারা প্রবেশ করতেন তারা বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকতেন বলে তিনি জানান। উত্তরা মডেল থানার অপারেশন অফিসার মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ জানান, জাহাঙ্গীর ওই দম্পতির সাবেক কর্মচারী। রাজু ও সাজুকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি। তাদের আটক করা গেলেই সব রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

 

সর্বশেষ খবর