রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
আশুলিয়ার চেকপোস্টে হামলা

পুলিশকে সাহায্য করে বিপদে ওরা

নাজমুল হুদা, সাভার

আশুলিয়ায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পর মুকুল হোসেন নামের পুলিশের এক সদস্য স্থানীয় শুভেচ্ছা হোটেলের ভিতর মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। একই ঘটনায় গুরুতর আহত নূরে আলম নামে পুলিশের অপর এক সদস্য দৌড়ে কোনোমতে মহাসড়ক অতিক্রম করেন। তবে সড়কের বিপরীত পাশে গিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এমন নির্মম দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি কনক দাস, আরিফুর রহমান, ফারুক ও সৈকতসহ আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের শরীরের ক্ষতস্থানে গামছা দিয়ে বেঁধে তাদের ভ্যানে করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। হাসপাতালের চিকিৎসকরা চেষ্টা করার আগে ভ্যানেই মৃত্যু হয় বগুড়ার মুকুল হোসেনের। বেঁচে যান নূরে আলম। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যারা পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন, তাদেরই ধরে থানা হাজতে আটকে রেখেছে পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পার হয়ে গেলেও তারা এখনো হাজত থেকে ছাড়া পাননি। বুধবার সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাড়ইপাড়া এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে দুই কনস্টেবলকে গুরুতর আহত করে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, গুলির শব্দ পাওয়ার পরই মহাসড়কের বিপরীত পাশে থাকা বিআরটিসির চালক কনক দাসসহ আরও কয়েকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এ সময় পুলিশের সদস্য মুকুলকে হোটেলের ভিতর রক্তাক্ত অবস্থায় এবং নূরে আলমকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে কনক দাস, লালন, সাভার পরিবহনের সুপারভাইজার ফারুক ও হোটেলের মালিক সৈকত তাদের শরীরের ক্ষতস্থানে গামছা পেঁচিয়ে একটি ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসীদের হামলার খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ অভিযান শুরু করে। সেদিন দুপুরেই আশুলিয়া বাড়ইপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুভেচ্ছা হোটেলের মালিক সৈকত ও বৃহস্পতিবার রাতের পৃথক অভিযানে সাভার পরিবহনের সুপারভাইজার ফারুক ও বিআরটিসির চালক কনক দাসসহ সাতজনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হলেও সৈকত ও ফারুককে গতকাল দুপুরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত থানা হাজতে আটক করে রেখেছে পুলিশ। শুভেচ্ছা হোটেলের মালিক সৈকতের স্ত্রী হাফিজা বেগম বলেন, তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ এলাকায়। আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় মহাসড়কের পাশে তার স্বামী ও স্বামীর বড় ভাই মিন্টু মিলে খাবারের হোটেল পরিচালনা করতেন। বুধবার সকালে হোটেলে তার স্বামী একাই ছিলেন। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর তার স্বামী ও আশপাশের আরও কয়েকজন স্থানীয় মিলে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার আক্ষেপ, যাদের জীবন বাঁচানোর জন্য তার স্বামী এগিয়ে গেলেন, তারাই তাকে ধরে আশুলিয়া থানা হাজতে আটকে রেখেছেন। সাভার পরিবহন বাসের সুপারভাইজার ফারুকের মা জাহানারা বলেন, তার ছেলে ফারুক পুলিশ সদস্য মুকুলের শরীরের ক্ষতস্থানে গামছা পেঁচিয়ে রক্ত থামানোর চেষ্টা করেন। পরে পুলিশের দুই সদস্যকেই ভ্যানে উঠিয়ে স্থানীয় ফাতেমা হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে তাদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর পরও পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে বাসা থেকে তার ছেলেকে তুলে নিয়ে থানায় আটক করে রেখেছে। এখন নাকি তার ছেলেকেও এ মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে। কেঁদে কেঁদে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আহত পুলিশদের উদ্ধার করেছে। সেটি সবাই দেখেছে। এখন তাকে বিনা দোষে হাজতে আটকে রাখার মানে কী!’ উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসা দুজনকে থানা হাজতে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাসিনুল কাদির এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। দুজনকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় থানা হাজতে আটক করে রাখার বিষয়ে তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপক সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় তাদের আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) দীপক সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ হত্যার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। আর এ কারণেই ফারুক ও সৈকতকে এখনো থানায় রাখা হয়েছে।

নিহত কনস্টেবলের ৩ সহকর্মী বরখাস্ত : ঢাকার আশুলিয়ায় চেকপোস্টে আক্রান্ত সহকর্মীকে ফেলে পালিয়ে যাওয়া সেই তিন পুলিশ কনস্টেবলকে গতকাল সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন কনস্টেবল পিনহারুল ইসলাম, ইমরান আজিজ ও আপেল মাহমুদ। শিল্পপুলিশ-১ এর উপ-পরিচালক কাওসার শিকদার জানান, দায়িত্বে অবহেলার কারণে এই তিন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন সকালে মোটরসাইকেলে চড়ে তিন দুর্বৃত্ত দুই কনস্টেবল মুকুল হোসেন ও নুর আলমকে কোপাতে থাকলে বাকি তিনজন পালিয়ে যান। পালানোর সময় নর্দমায় পড়ে আহতও হন পিনহারুল। শিল্পপুলিশের কর্মকর্তা কাওসার বলেন, ‘কনস্টেবল মুকুলকে হত্যা ও নুর আলমকে কুপিয়ে জখম করার সময় এই তিন কনস্টেবল প্রতিরোধের চেষ্টা না করে গজারি বনের ভিতর দিয়ে পালিয়ে যান। তাই প্রাথমিকভাবে তাদের সাময়িক বরখাস্ত এবং ঘটনাটির বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।’

 

সর্বশেষ খবর