মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঢাকা মহানগর রাজনীতি

আওয়ামী লীগে জট খুলছে না

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগে জট খুলছে না

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনে গঠিত নতুন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৭ ডিসেম্বর। কিন্তু সম্মেলনের তিন বছরেও কমিটি গঠন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। কমিটি গঠন নিয়ে ‘মহাজট’ না খোলায়  শেষ পর্যন্ত নতুন কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এক যুগের পুরনো কমিটি দিয়েই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। নগর নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, নতুন সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও তারা মেয়াদকালের মধ্যে আর নতুন কমিটি পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ কমিটি ঘোষণা হবে তাও কেউ জানেন না। ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কেন্দ্রীয় নেতা দুই দফা দলীয় প্রধানের কাছে খসড়া তালিকা জমা দিয়েছেন। কয়েক দফা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আলোর মুখ দেখেনি নতুন কমিটি। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর সম্মেলনের দুই দিন পর অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে মূল কমিটির সঙ্গে নগর কমিটিও ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু অবিভক্ত ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করা নিয়ে নগর নেতাদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে মতবিরোধ শুরু হয়। যে কারণে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। গত দুই মাস ধরে জোর গুঞ্জন শুরু হয়, কমিটি পাচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় খাদ্য ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে মহানগর কমিটি করতে বিশেষ দায়িত্ব দেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা কয়েক মাস কাজ করে গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম দফা এবং ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় দফা খসড়া কমিটির তালিকা জমা দেন। জানা গেছে, ঢাকা মহানগরের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে দক্ষিণে এবং মহানগরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি ও সাদেক খানকে উত্তরের মূল দায়িত্বে রাখা হয় ওই খসড়া তালিকা দুটিতে। তবে ঘোষণার আগেই প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে আপত্তি তোলেন বর্তমানে দায়িত্বে থাকা নগরের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে দেখা করেন। এমনকি তারা পাল্টা কমিটির তিনটি খসড়া তালিকা তৈরি করে দলীয় সভানেত্রীর কাছে জমা দেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, আগে বিভক্ত নগর কমিটিতে থাকতে না চাইলেও এখন পদ পেতে মরিয়া বর্তমান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এ জন্য অনুসারীদের নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তিনি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে এম এ আজিজকে সভাপতি রেখে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। উত্তরেও এ কে এম রহমত উল্লাহ ও সাদেক খানের বিকল্প হিসেবে কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এমপি, আসলামুল হক আসলাম এমপির নাম যুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, মূলত মহানগরের শীর্ষ নেতাদের কারণেই তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। নতুন কমিটি গঠন নিয়ে তাদের তৈরি করা মহাজট সহসা খুলবে বলে মাঠের নেতা-কর্মীরা মনে করেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিটি এতদিন হয়েই যেত। কিন্তু কমিটি সমন্বয়কদের সঙ্গে মহানগরের বর্তমান কমিটির বনিবনা না হওয়ায় নতুন কমিটি হচ্ছে না। আমরা কয়েকজন সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে কমিটি অনুমোদন দেবেন না। সবার সঙ্গে বসে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান কমিটিকে দ্রুত ডাকবেন বলে জানান ওই নেতা।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর