মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মানুষের জীবনের নিরাপত্তা আজ বিপন্ন

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

মানুষের জীবনের নিরাপত্তা আজ বিপন্ন

ড. আবুল বারকাত

গণমানুষের অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী গতি-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণারত অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা আজ বিপন্ন। যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা-আইএসের পেছনে ধাওয়া করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র যেদিকে তাকাচ্ছে, আল-কায়েদাও সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশিদের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। এখন সময় হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর। গত শনিবার নিউইয়র্কে তার নিজের লেখা সর্বশেষ গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবর এনআরবি নিউজের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে যা নেই, তা রয়েছে বাংলাদেশে। স্কুলগামী প্রতি তিনজন ছাত্রছাত্রীর একজনই যাচ্ছে মাদ্রাসায়। একইভাবে প্রতি ৩ শিক্ষকের একজন যাচ্ছেন মাদ্রাসায়। মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের ভূমিকা-অবদান এখনো স্পষ্ট হয়ে উঠেনি অভিযোগ করে একাত্তরের তরুণ এই মুক্তিযোদ্ধা বারকাত বলেন, ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ লাখই গ্রাম-বাংলার। কিন্তু সে চিত্র ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়নি। কারণ, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি করেছেন বা করছেন তারা সবাই শহুরে। যদিও একাত্তরে তারাও গ্রামেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত আরও বলেন, একাত্তরে পাক হায়েনার দল দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছে বলে সবাই দাবি করলেও প্রকৃত অর্থে তা ১০ লাখের বেশি হবে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে একটি এলাকায় জরিপ চালিয়ে আমার এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। আমি গণজাগরণ মঞ্চে বক্তৃতার সময় বলেছিলাম, নারীদের বীরাঙ্গনা বলা হচ্ছে কেন? তাদের নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তাহলে সবাই তালিকাভুক্ত হতেন এবং সঠিক সংখ্যা জানা সহজ হতো। আমার এ বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হয় এবং সর্বশেষ সম্ভ্রম হারানো আমাদের মা-বোনদের নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হলো। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ড. বারকাত আরও বলেন, বাংলাদেশের ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন অন্যের সম্পদ ছিনিয়ে। একইভাবে বাংলাদেশের ব্যাংকে যারা অর্থ সঞ্চয় করেন তার মাত্র ৪% হলেন এই ধনীরা। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে যত ঋণ নেওয়া হচ্ছে তার ১%ও সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন না। জনা পঞ্চাশেক লোকের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিপুল অর্থ পড়ে আছে। শুধু তাই নয়, ঋণের এ অর্থ তারা বিনিয়োগ করেছেন প্রাইভেট সেক্টরে ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠায়। অর্থাৎ রাষ্ট্রের অর্থ ঋণ নিয়ে তারা ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি বলেন, সুশীল ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির ১৭ জনের সবাই বাংলাদেশ ছাড়াও বিদেশি আরেকটি দেশের পাসপোর্ট রয়েছে। গুলশান-বনানীতে আলিশান বাড়িও আছে। প্রত্যেকের সন্তানরাই বিদেশে লেখাপড়া করছে। এই ১৭ জনকেই দেখা যায় বাংলাদেশের প্রধান দুই নেত্রীকে পরামর্শ প্রদান করতে। এদের মধ্যে যাকে সবচেয়ে বড়মাপের সুশীল বলে বিবেচনা করা হয়, সেই ভদ্রলোকটি ১৯৭৮ সালে গুলশানে ১০ কাঠার একটি প্লট পান। ১৯৮২ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ভবনের ট্যাক্স প্রদান করেননি। যদিও হর-হামেশা তার মুখে বিভিন্ন সেক্টরের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিদার কথা উচ্চারিত হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা-লেখক ও প্লেইন্সবরো টাউনশিপের কাউন্সিলম্যান ড. নূরন্নবী। সাংস্কৃতিক সংগঠক সেমন্তী ওয়াহেদের সঞ্চালনে ড. বারকাতের গ্রন্থ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, নিনি ওয়াহেদ এবং জাতিসংঘের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ও পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ড. নজরুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল মো. শামীম আহসান।

সর্বশেষ খবর