মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
দিল্লির চিঠি

রাজনৈতিক কর্তৃত্ব খর্ব হলো বিজেপির

ঋতুপর্ণা রায়

বিহারে নীতিশ কুমারের বিরাট জয়ের পর কেন্দ্রে বিজেপিবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোট আরও পোক্ত হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি তাদের দাবি, প্রতিবেশী বিহারের ভোটের বার্তা কিছুটা হলেও পৌঁছবে পশ্চিমবঙ্গে। এক কথায়, বিহারে ‘মোদি হাওয়া’ মুখ থুবড়ে পড়ার পর আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে বিজেপি খাতাই খুলতে পারবে না-এমনটাইদাবি করছেন তৃণমূলের একটি বড় অংশ। বিহারের গণনা শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে অভিনন্দন জানান নীতিশ কুমার আর লালুপ্রসাদকে। মহাজোটকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগে বিজেপিকে বিঁধতেও ছাড়েননি মমতা। মুখ্যমন্ত্রী তার টুইটারে লেখেন, ‘অভিনন্দন নীতিশজি, লালুপ্রসাদজি, এবং আমার বিহারের ভাইবোনেরা। এই জয় সহিষ্ণুতার। এটি অসহিষ্ণুতার পরাজয়।’ প্রায় একই সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে বিহারের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ ব্রায়েন বলেন, ‘বিজেপি হারল, দেশ রক্ষা পেল।’ পরে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং আরও কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যে সংসদের বাইরে ও ভেতরে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করতে শুরু করে দিয়েছেন। এই বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে। অন্য অনেক দল এতে যোগ দেবে।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল নেতৃত্ব এটা হিসাবের মধ্যে রাখতে চাইছেন যে, বিহার-সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে একটি বড় বিহারি ভোটব্যাংক রয়েছে। উত্তর দিনাজপুর, শিলিগুড়ি, ডুয়ার্স এলাকায় বিহারি জনসংখ্যা যথেষ্ট। এ ছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনায়ও কয়েক লাখ বিহারি বসবাস করেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নীতিশের দলকে একটি বা দুটি আসন ছেড়ে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে দলীয় অন্দরমহলে। সে ক্ষেত্রে বড়বাজার এলাকায় লালুপ্রসাদকেও একটি আসন দিতে পারে তৃণমূল। দেড় বছর ধরে কেন্দ্রে একটি অকংগ্রেসি, অবিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ জোট গঠনের জন্য সক্রিয় দৌত্য করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েক দফায় তিনি বৈঠক করেছেন শারদ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, লালুপ্রসাদ, সপা ও বসপা নেতাদের সঙ্গে। স্বর তুলেছেন রাজ্যগুলোর প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে। তবে এই ফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে বাম দল বরাবরই তার কাঁটা হয়ে থেকেছে। বাম দল যেহেতু মমতার কাছে রাজনৈতিকভাবে অচ্ছুৎ, তাই এটিকে বাইরে রেখেই দিল্লির অঙ্ক কষতে হচ্ছে মমতাকে। তবে নীতিশ-লালুর এই বিরাট জয়ে মমতার বিজেপিবিরোধী মঞ্চ অনেকটাই জোর পেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পাঁচ সপ্তাহ আগেই রাজধানীতে অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মোদি সরকারকে চাপে ফেলাটাই ছিল উদ্দেশ্য। মমতা তাতে উপস্থিত থাকলেও আসতে পারেননি নীতিশ। বিহারের নির্বাচন নিয়ে তার ব্যস্ততা তখন তুঙ্গে। তিনি না এলেও চিঠি দিয়ে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সেদিন। তবে সেখানে মমতা এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা মানিক সরকার ছাড়া কেউই না আসায় সে সম্মেলন কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল। মমতা ও মানিক কেউ কারও মুখোমুখিও হননি। দুজনই পৃথকভাবে বৈঠক করেছিলেন কেজরিওয়ালের সঙ্গে। এবার মমতার চেষ্টা থাকবে বিভিন্ন জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে নীতিশ ও লালুকে (যারা এ মুহূর্তে বিজেপি-বিরোধিতার সবচেয়ে সফল ব্র্যান্ড) সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগা। বিহারে বিজেপি তথা মোদি বিরাট ধাক্কা খাওয়ার পর গোটা দেশে তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিঃসন্দেহে কিছুটা খর্ব হয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতামত, এটি মমতা তথা পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের পক্ষে যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক। কেননা বিহার ভোটের পর রাজ্যসভায় বিজেপির শক্তি বাড়ানোর যে স্বপ্ন ছিল, তা ভঙ্গ হয়েছে। ফলে সংসদে বিল পাস করানোর স্বার্থে আঞ্চলিক অবিজেপি দলগুলোর ওপর নির্ভরতা মোদি সরকারের বাড়বে বই কমবে না। তাই এ পরিস্থিতিতে সারদা কেলেঙ্কারির জেরে সিবিআই তদন্ত নিয়ে তৃণমূলকে খুব বেশি চাপের মধ্যে ফেলা মোদির পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই মনে করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

সর্বশেষ খবর