বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নূর হোসেন ফিরছেন ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে

মির্জা মেহেদী তমাল, ঢাকা ও দীপক দেবনাথ, কলকাতা

নূর হোসেন ফিরছেন  ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে

নূর হোসেন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশের সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কবে? বাংলাদেশের কারাগারে আটক ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগীকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের পর এমন প্রশ্ন এখন সর্বমহলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের পর দুয়ার খুলেছে নারায়ণগঞ্জের এই ভয়ঙ্কর গডফাদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার। উলফার শীর্ষ নেতা অনুপের বদলে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ফেরত পাঠাবে ভারত সরকার। পশ্চিমবঙ্গ আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী আগামী ১৫ ডিসেম্বরের আগেই নূর হোসেনকে দেশে ফেরত আনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যে কোনো দিন তাকে দেশে ফেরত আনা হতে পারে। আর এর মধ্য দিয়ে নূর হোসেনই হবেন প্রথম ব্যক্তি, যাকে ২০১৩ সালের ভারত-বাংলাদেশ বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় দেশে ফেরত আনা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গে আটক নূর হোসেনকে ফেরত পেতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। ভারত সরকার অনুপ চেটিয়ার বিনিময়ে নূর হোসেনকে ফেরত দিতে রাজি হয়। অনুপকে হস্তান্তরের পর নির্দিষ্ট কোন তারিখে নূর হোসেনকে দেশে পাঠানো হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তবে তাকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানো হতে পারে। অপর একটি সূত্র জানায়, নূরের দেশে ফেরার সম্ভাব্য তারিখ ২ ডিসেম্বর। প্রায় ১৮ বছর বাংলাদেশের কারাগারে আটক থাকার পর অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগীকে গতকাল ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে কাশিমপুর কারাগার থেকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা জে পি সিংয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় অনুপ চেটিয়াকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সম্পর্কে বলেন, ‘নূর হোসেনকে ভারত থেকে আনার ব্যাপারে সব ধরনের আইনগত জটিলতা শেষ হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাকে ফেরত আনতে আমরা প্রস্তুত হয়ে আছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখনই আমাদের জানাবে, তখনই তাকে আনতে চলে যাবে আমার টিম।’ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদারকে মুঠোফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘নূর হোসেনকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশ মেনে ১৫ ডিসেম্বরের আগেই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জনের এবং পরদিন আরেকজনের লাশ ভেসে ওঠে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যান প্রধান আসামি নূর হোসেন। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল সাত খুনের মামলায় র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার এম এম রানা এবং নূর হোসেনসহ ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে নারায়ণঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জানা গেছে, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নূর হোসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যান। নৃশংস ওই ঘটনার ৪৯ দিন পর সেখানে গ্রেফতার হন নূর হোসেন। তিনি বর্তমানে চব্বিশ পরগনার বারাসাতের জেলে বন্দী রয়েছেন। তিন সহযোগীসহ পশ্চিমবঙ্গে নূর হোসেন আটক হলেও এরই মধ্যে তার অন্যতম সহযোগী ওয়াহিদুজ্জামান সুমন জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে বিধান নগর পুলিশ। তাকে ফেরত পেতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে আর্জি জানানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের আর্জি মেনেই নূরকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তৎপর হয় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়। সেই মতো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২১ ধারা অনুযায়ী নূর হোসেনের বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চলতি বছরের ২০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন জানানো হয়। নূরকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে ১৬ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগই প্রত্যাহার করে নেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা দায়রা আদালত। একই সঙ্গে নূরকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে আদালত উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসনকে দুই মাস সময়সীমাও বেঁধে দেন। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই নূরকে ফেরত পাঠানোর বিষয় সম্পর্কিত প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতেও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশ মেনে নূর হোসেনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত মাসে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা, লক্ষীপূজা ও মহররমের ছুটি থাকায় সে প্রক্রিয়ায় কিছুটা ভাটা পড়লেও ছুটি শেষ হতেই ফের বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাচালি শুরু হয়।

নিয়ম মেনে নূর হোসেনের বন্দী প্রত্যর্পণের কাগজপত্র চূড়ান্ত হলে বিধান নগর ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা শাসক, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সঙ্গে সমন্বয় করে দিনক্ষণ ঠিক করে যত শিগগির সম্ভব নূরকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্র জানায়, নূরকে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

 

সর্বশেষ খবর