বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সরানো হবে জিয়ার কবর

লুই কানের মূল নকশা বাস্তবায়ন হবে, সরে যাবে সব কবর ও স্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরানো হবে জিয়ার কবর

স্থপতি লুই কানের নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে সরিয়ে নেবে সরকার। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর থাকবে না। থাকবে না অপর সাতটি কবর ও অন্যান্য স্থাপনাও। এমনকি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রও সরিয়ে নেওয়া হবে। কবরগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে কারণ লুই কানের নকশায় কোথায়ও কবরের জন্য স্থান রাখা  হয়নি। লুই কানের মূল নকশা হাতে পাওয়ার পরই এসব কবর ও স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে। আর মূল নকশা ধরে নির্মাণ করা হবে সচিবালয়সহ অন্যান্য স্থাপনা। এ জন্য আমেরিকার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার আর্কাইভসে সংরক্ষিত মূল নকশা আনতে অর্থও বরাদ্দ করেছে সরকার। শিগগির লুই কানের মূল নকশা পাওয়া যাবে জানিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, আশা করছি ছয় মাসের মধ্যে মূল নকশা হাতে পাওয়া যাবে। তারপর পরই ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো এ সংক্রান্ত নথিটি এখনো মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসেনি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা মূল নকশার অপেক্ষা করছি।  পাকিস্তানি জমানায় ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলে ১৯৬৪ সালে ১৫ মিলিয়ন ডলারের অনুমিত ব্যয় ধরে লুই কানের নকশা অনুযায়ী শেরেবাংলা নগর এলাকায় সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে। ব্যয় হয় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। লুই কানের মূল নকশায় সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের পাশাপাশি নতুন সচিবালয়সহ আরও বেশকিছু স্থাপনা শেরেবাংলা নগরে হওয়ার কথা। কিন্তু মূল নকশা আমলে না নিয়ে বিএনপি সরকার সেখানকার ১০ একর জমিতে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করে। এটি পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নামে নামকরণ করা হয়। আর ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরকে কেন্দ্র করে পাঁচ বিঘা জমিতে সমাধি কমপ্লেক্স গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৩ সালে কাজ শুরু হয়, চলে ২০০৭ পর্যন্ত।

জিয়াউর রহমান ছাড়াও সংসদ ভবন এলাকায় আছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খানের কবর। এ ছাড়া  লুই কানের নকশাকে পাশ কাটিয়ে শেরেবাংলা নগর এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে আরও সাতটি স্থাপনা। যার মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরের চারদিকে চারটি প্রবেশ পথে থাকা ঝুলন্ত সেতু, সম্মেলন কেন্দ্র ও মসজিদসহ চারটি স্থাপনা। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকা নিয়ে লুই কানের যে নকশা সেটি ছিল সেকেন্ড ক্যাপিটাল অব বাংলাদেশ। এটার সম্পূর্ণ এলাকাজুড়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ভবন, সচিবালয়, প্ল্যানিং কমিশনের ভবন, প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভবন, লেকসহ বিভিন্ন স্থাপনার কথা বলা হয়েছে। লুই কান যত স্থাপনা করেছেন তার মধ্যে এই নকশা পৃথিবীর অন্যতম একটি। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন করে কোনো সচিবালয় ভবন নির্মাণ করা হয়নি। লুই কানের নকশায় শেরেবাংলা নগর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি পরিকল্পনা ছিল। আগারগাঁওয়ে যত ভবন হচ্ছে সবই লুই কানের নকশা অনুযায়ী হচ্ছে। তিনি বলেন, কিন্তু বিষয় এগুলো নয়, মূল বিষয় হচ্ছে লুই কানের নকশায় কোথায়ও কবরস্থান নেই। কবরস্থানের জন্য জায়গাও রাখা হয়নি। এখন যদি সরকারের বিশেষ কোনো ব্যক্তি মারা যান তাহলে আমরা কী সংসদ ভবনের দক্ষিণপ্লাজা সংলগ্ন সামনের সবুজ চত্বরে তার কবর দিয়ে দেব? সেটা কী ঠিক হবে? তিনি বলেন, কবরস্থানের জন্য আলাদা জায়গা আছে। যেমন বনানী, আজিমপুর, মিরপুর। তিনি বলেন, কোনোভাবেই মূল নকশায় ডির্স্টাব করা ঠিক নয়, এটা অপরাধ। এই অপরাধ যারা করেছেন তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। জাতির কাছে তারা কিন্তু অপরাধ করেছেন।  মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, কবর এখানে থাকা উচিত নয়। কবরের জায়গায়ই কবর থাকা উচিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেনের কাজ করতে গিয়ে অনেকগুলো কবর, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। জাতীয় প্রয়োজনে যে কোনো কিছু করা যায়। প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রও আমরা সরিয়ে নেব। নকশা অনুযায়ী শেরেবাংলা নগরে সব হবে গ্রিন ও এনার্জি সেভিং ভবন।  মন্ত্রী জানান, মূল নকশায় সচিবালয় স্থাপনের কথা থাকলেও সেখানে সচিবালয় স্থানান্তর করতে সরকার লুই কানের মূল নকশা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর