বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গণতন্ত্রের সংকটে পড়েছে দেশ

I শামা ওবায়েদ I

বিগত ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশ একের পর এক ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওই নির্বাচন দেশ-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন এমপি হওয়ার নজির সৃষ্টি করেছে এ আওয়ামী লীগ সরকার। জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় গণতন্ত্র নিয়ে সংকটে পড়েছে দেশ। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলো ধসে পড়ছে।  সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের টনক নড়েছে। ব্লগার, প্রকাশক, পুলিশসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা গুম-খুনের শিকার হচ্ছেন। বিরোধী মত-পথের মানুষের ওপর মামলা-হামলা বা গ্রেফতারের খড়গ নেমে আসছে। দেশে জঙ্গি বা আইএস আছে কি নেই-এ নিয়ে এখন নানা চাপে পড়েছে সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আইএস স্বীকারে আন্তর্জাতিক চাপের কথা জানিয়েছেন। দেশে যখন পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে থাকে-তখন সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা কতটুকু থাকতে পারে-তা কারও কাছেই অজানা নয়। আমাদের দেশে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি, বিচারব্যবস্থা, সিভিল প্রশাসন নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও ক্ষমতাসীন দলের কথায় ওঠ-বস করে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো জাতি। দেশের সামগ্রিক অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐকমত্যের ডাক দিয়েছেন। এর আগেও একাধিকবার তিনি ওই আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। দেশের স্বার্থে এই ক্রাইসিস মুহূর্তে তিনি আবারও জাতীয় সংলাপের কথাও বলেছেন। আমিও মনে করি, দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি জরুরি। কে ছোট, কে বড়, কে উঁচু কে নিচু-সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে জাতীয় স্বার্থেই এ ঐকমত্য প্রয়োজন। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। এখানেও কোনো বৈষম্য থাকা উচিত না। দেশে আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্রও অচল হয়ে পড়ে। সরকার, বিরোধী দল কিংবা সাধারণ মানুষের আইনের সমান অধিকার থাকা উচিত। কেউ দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাবে, আবার কেউ বিনা অপরাধে সাজা খাটবে, জেল-জুলুম কিংবা গ্রেফতার খড়গ নেমে আসবে-তা হতে পারে না। আমি মনে করি, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবাই এগোলে জাতীয় ঐকমত্যে কোনো বাধা আসতে পারে না। এক্ষেত্রে সবাইকে নিজ স্বার্থ বিবেচনায় না রেখে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। খুনি বা চোরদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না-এ ধরনের বক্তব্যও পরিহার করা উচিত। গণতন্ত্রে শত্রুর সঙ্গেও সংলাপ সমঝোতার নজির রয়েছে। তাছাড়া আমরা একই দেশের, একই বর্ণের মানুষ। গণতন্ত্রে প্রত্যেকেরই আলাদা মত থাকতে পারে। সবার মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আর গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে সংলাপ। চলমান সব সমস্যাই সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।

লেখক : জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিএনপি।

 

সর্বশেষ খবর