শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফের গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড়

জিন্নাতুন নূর

দেশের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলো গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহক পর‌্যায়ে আরেক দফা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে লোকসানে আছে এমন তথ্য দিয়ে দাম বৃদ্ধির আবেদন করেছে অধিকাংশ সেবাদানকারী সংস্থা। বিইআরসির কারিগরি কমিটি বর্তমানে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সম্প্রতি বিইআরসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।  

এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্টে  বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিইআরসি। সে সময় গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বর্ধিত দাম কার্যকর হয়। কিন্তু দাম বৃদ্ধির ঘোষণার তিন মাস না যেতেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিইআরসির কাছে আবারো আবেদন করেছে। বিইআরসি সূত্রে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন বোর্র্ড, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি., ঢাকা ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি লি. ও তিতাস গ্যাসসহ অধিকাংশ কোম্পানি দাম বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে। আর এই বিষয়টি এখন বিইআরসির কারিগরি দল যাচাই-বাছাই করছে। তবে এটি কোম্পানিগুলোর চ‚ড়ান্ত প্রস্তাব নয়। এজন্য প্রয়োজনে গণশুনানির ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে যে দরে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সেবা দিচ্ছে তাতে তারা অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে। কারণ ২৩ পয়সা বাল্ক হচ্ছে পাইকারি মার্জিন। আর ৫ পয়সা হচ্ছে হুইলিং চার্জ। কিন্তু বিইআরসি ডিস্ট্রিবিউশনে ২৮ পয়সার পুরোটা ভোক্তাদের ওপর সমন্বয় করেনি। এতে ভোক্তাদের জন্য মাত্র ১৮ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর বাকি ১০ পয়সা কোম্পানিগুলোকে দিতে হচ্ছে। এ কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলো হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাস কোম্পানিগুলো বলছে, ক্ষেত্রে গ্যাসের অতিরিক্ত মূল্য কোম্পানিগুলো পাবে না। এটি জ্বালানি নিরাপত্তা খাতের ফান্ডে যাবে। আর এই সিদ্ধান্তে কোম্পানিগুলো সন্তুষ্ট নয়। আগস্টে দাম বৃদ্ধির পর বেশ কয়েকটি কোম্পানি তাদের লাভ সমন্বয় করতে পারেনি। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাইকারি বিদ্যুতের দাম, হুইলিং চার্জ ও কর্মকর্তাদের বর্ধিত বেতন পরিশোধে তারা হিমশিম খাচ্ছে। তিতাস গ্যাস মূলধনের তুলনায় বেশি লভ্যাংশ ফেরত দেওয়ায় লোকসানে থাকার কারণেই বিইআরসির কাছে এই আবেদন করে। বিইআরসির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির আবেদন আমাদের কারিগরি কমিটির কাছে গিয়েছে বলে জানি। তবে বিষয়টি এখনো আমাদের কাছে আসেনি। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটির যাচাই-বাছাই করছে। আবেদনগুলো আমাদের কাছে আসলে তা আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। শিগগিরই আমাদের কারিগরি কমিটির সঙ্গে বসে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করব। তবে বিদ্যুৎ খাতে আমাদের ‘অটো ট্যারিফ’ সিস্টেম চালু করতে হবে বলে সেলিম মাহমুদ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অটো ট্যারিফ সিস্টেমে গ্রাহকরা বিদ্যুতের বিল দিচ্ছেন। এ ব্যবস্থায় মাসে ভোক্তা ও অর্থনীতির ওপর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। আর এটি ব্যবহারকারীদের কাছেও সহনীয়। আমাদের বিদ্যুৎ খাত যে অবস্থায় যাচ্ছে সেদিক বিবেচনায় আমাদেরও অটো ট্যারিফ ব্যবস্থায় যেতে হবে।

 এখন আমরা যেভাবে বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি তা পুরনো পদ্ধতি। যেহেতু আগের চেয়ে প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে এজন্য বিদ্যুৎ বিল প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদেরও আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এই পদ্ধতিতে বছর শেষে হিসাব করলে দেখা যাবে গ্রাহকদের অতিরিক্ত খরচ হয়নি। একইভাবে গ্যাসের ক্ষেত্রে বিইআরসির এই সদস্য প্রতি ৬ মাসে একবার রিভিউ করার পরামর্শ দেন। তবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য যে আবারও বাড়বে আমি এমনটিও বলছি না- বলেন সেলিম মাহমুদ। তবে কতটুকু দাম সমন্বয় করা হলে গ্রাহকদের জন্য সহনীয় হবে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলে বিইআরসির সদস্য সচিব জানান।

সর্বশেষ খবর