শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুঃসময়েও সংস্কারপন্থিদের টানছে না বিএনপি

মাহমুদ আজহার

দুঃসময়েও সংস্কারপন্থিদের টানছে না বিএনপি

মামলা-হামলা আর গ্রেফতার খড়গে দিশাহারা হয়ে পড়েছে বিএনপি। সামনে অগোছালো দলকে সুসংগঠিত করার কঠিন চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে দলের সব নেতাই মামলায় কাবু। সাজা আতঙ্কও বিরাজ করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে। এদিকে বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলে নেতৃত্বশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। দল ভাঙার ষড়যন্ত্রও চলছে। আসন্ন পৌর নির্বাচন ঘিরে নতুন করে দেশজুড়ে চলছে গণগ্রেফতার। দলে যখন এই দুঃসময় তখন কথিত সংস্কারপন্থি বলে খ্যাত বিএনপির অর্ধশতাধিক সাবেক এমপি ও নেতা দলের বাইরে।

জানা যায়, সংস্কারপন্থিদের অনেকেই দলে ফেরার বার বার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এখন তারা বেগম জিয়ার দেশে ফেরার অপেক্ষা করছেন। তারা আশা করছেন, বিএনপি-প্রধান দেশে ফিরে দল পুনর্গঠন করলে এবার তাদের ঠাঁই হবে। অনেকেই আবার বিএনপিতে না ফিরে নতুন দল করার চিন্তাভাবনা করছেন। জানুয়ারি পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণও করবেন তারা।

সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক নাগরিক সমাবেশে অভিযোগ করেছেন, সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনরাও দল ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এখনো কেউ দল ভাঙতে পারবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করছেন, অচিরেই বিএনপি ভাঙনের মুখে পড়বে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাবেন। সংস্কারপন্থি সাবেক এমপি ও নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান ও মোফাজ্জল করিম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও হুইপ আশরাফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, জি এম সিরাজ, কাজী রফিকুল ইসলাম, প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান, দেলোয়ার হোসেন দুলু, আনোয়ার হোসেন, নূরুল ইসলাম মণি, শামীম কায়সার লিঙ্কন, মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, ইলেন ভুট্টো, এম এ জিন্নাহ, শাহরিয়ার আখতার বুলু, শাম্মী শের, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু প্রমুখ। জানা যায়, এই নেতাদের মধ্যে জেড এ খান, জি এম সিরাজ, জহির উদ্দিন স্বপন, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন দুলু, শামীম কায়সার লিঙ্কনসহ বেশ কয়েকজন দলে ফেরার অপেক্ষা করছেন। খালেদা জিয়ার সবুজ সংকেত পেলেই তারা দলে সক্রিয় হবেন। জানা যায়, সাবেক এমপি ও নেতাদের একটি অংশকে দলে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির হাইকমান্ডও ইতিবাচক। অনেকের সঙ্গে দলের নীতিনির্ধারকরা যোগাযোগও করেছেন। বেগম জিয়া দেশে ফিরলেই তাদের দলে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে কিছু নেতার ব্যাপারে এখনো কঠোর মনোভাবে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে তাদের ভিন্ন দল করা ছাড়া সামনে কোনো পথ খোলা নেই বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন দল গঠন কিংবা অন্য কোনো চিন্তা এ মুহূর্তে আমার মাথায় নেই। আমি বিএনপিতে ছিলাম, আছি ও থাকব। দলে এখন কোনো পদ-পদবি না থাকলেও মন তো বিএনপিতেই রয়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। আশা করছি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে দল পুনর্গঠন করবেন। সেখানে বাইরে থাকা দলের নেতাদেরও তিনি দলে নিয়ে আসবেন। একই কথা বলেন সাবেক এমপি জি এম সিরাজ। তার ভাষায়, বিএনপির মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে আমি আছি। তবে সক্রিয় নেই। আমি চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার জনগণই আমার প্রাণ। দলের নেতাদের সঙ্গেও আমার যোগাযোগ আছে। বিএনপির বাইরে নতুন কিছু করার চিন্তাও আমার নেই। জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আমরা বিএনপিতে আছি। তবে দলে এখন সক্রিয় নেই। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সবুজ সংকেত পেলেই দলে সক্রিয় হব। ভিন্ন কোনো দল করার চিন্তা এ মুহূর্তে নেই। শহীদ জিয়ার আদর্শই আমাদের শেষ ঠিকানা। তবে সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন বলেন, আমরা নতুন একটি দল করার চেষ্টা করছি। তবে দিনক্ষণ এখনই বলতে পারব না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ সবার কাছেই আমাদের আহ্বান থাকবে, নতুন দলে যোগ দিন। পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসুন। সময় হলেই আমাদের কার্যক্রম জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। একই সুরে কথা বলেন সাবেক এমপি আবু হেনা। তিনি বলেন, বিএনপিতে এখন কোনো নেতৃত্বই নেই। বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে ১০৬ জন এমপি দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তিন-চার জন ছাড়া সবাই এখনো দলের বাইরে। এখন মূল বিএনপি কারা- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমরা চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব। সাবেক এমপি শহিদুল হক জামাল বলেন, বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনা আছে। জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমার আশঙ্কা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিনের মতো অনেক নেতাই দল থেকে বেরিয়ে যাবেন।

সর্বশেষ খবর