শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দরিদ্ররা যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি মানুষের জীবনই যাতে উন্নত হয়, তার সরকার সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সবারই চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। হতদরিদ্র মানুষ যেন দেশে চিকিৎসা বঞ্চিত না হন সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। ১২ বছর পর সম্মেলনকে ঘিরে তাই নেতা-কর্মীদের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল লক্ষ্যণীয়। তবে অব্যবস্থাপনাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওষুধের চেয়ে বরং আপনাদের আচার-আচরণ, ভালোবাসা ও ভালো ব্যবহার দিয়েই তাদের বেশি সুস্থ করতে পারেন। তাদের মনে বিশ্বাস আনতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, চিকিৎসকরাও সেভাবে সচেষ্ট থাকবেন যেন হতদরিদ্র মানুষও সেবা বঞ্চিত না হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাচিপের সদস্যদের নিজে কী পেলাম কী পেলাম না তা চিন্তা না করে দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতে হবে। ব্যবহার দিয়ে তাদের আস্থায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা মহৎ পেশায় নিয়োজিত। মানুষের কল্যাণ ও সেবার দিকে নজর রেখে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন এটাই আশা করি। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশি মানুষ খুন করে সরকার উৎখাত করতে পারল না বলে এখন বিদেশি মানুষ খুন করা শুরু হয়েছে। যারা স্বাধীনতা চায়নি, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না তারাই খুন-খারাবি করে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায়। দেশের মানুষ খুন করে সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে এখন বিদেশিদের হত্যা করে সরকার উৎখাত করতে চায় বিএনপি নেত্রী। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যেন তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। যারা এদেশের উন্নয়ন চায়নি, যারা ক্ষমতায় থেকে দেশের মানুষের উন্নতি করেনি। তাই গুপ্তহত্যায় নেমেছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ২০১৩ সালে নির্বাচন বানচাল করতে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করলেন। ২০১৫ সালে তিন মাস তারা শুধু মানুষ হত্যা করা আর মানুষ পোড়ানোর কাজ করেছে। আর এখন শুরু হয়েছে গুপ্তহত্যা। তিনি বলেন, আমরা যখন কোনো উন্নয়ন কাজ করি, চিকিৎসাসেবা দেই তখন কে ভোট দিল আর কে দিল না সেই চিন্তা করি না। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি, মানুষের জন্য কাজ করি আর তাদের জন্যই রাজনীতি করি। কী পেলাম আর কী পেলাম না সেই চিন্তা না করে দেশকে কতটুকু দিতে পারলাম, দেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। বিশ্বের বুকে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যআয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব। দেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সংঘবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু, স্বাচিপের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ডা. শফিকুর রহমান প্রমুখ। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মহাসচিব ডা. ইকবাল আর্সলান। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ডা. চিত্তরঞ্জন দাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন তুলে ধরে বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। আমরা ১৩ হাজার ৮০০ কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করি। বিএনপি এসে তা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে কারণ দেখিয়েছিল এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেলে, ফ্রি ওষুধ পেলে সবাই নৌকায় ভোট দেবে। মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে না। তাই তারা ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। আমরা ভোটের জন্য নয়, মানুষের কল্যাণে কাজ করি। আমরা আইন করে দেব যেন সরকারে যে-ই থাক এগুলো কেউ বন্ধ করতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আরও বলেন, তার সরকার প্রতিটি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা, চিকিৎসাসেবার মান, হাসপাতাল, মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ৩৪৫টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছে। চিকিৎসক, নার্সের সংখ্যা বাড়িয়েছে। নার্সদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১২ হাজার ৪০০ আসনে উন্নীত করেছে। ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে তার সরকার।

সর্বশেষ খবর