সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আতঙ্ক পশ্চিমা বিশ্বে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

আতঙ্ক পশ্চিমা বিশ্বে

ফ্রান্সে নিহতদের প্রতি গতকাল শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় স্বজন হারা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন -এএফপি

প্যারিস হামলার প্রভাব পড়েছে গোটা পশ্চিমা বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মনে করছেন, ঝুঁকিমুক্ত নয় লন্ডনও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় শহরে বাড়িয়েছেন নিরাপত্তা। পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে। একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে কানাডা ও রাশিয়া। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোও রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক। ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে এশিয়ার দেশ ভারত, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ঢাকায়ও সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে। অবশ্য নিরাপত্তা জোরদারের পরও মানুষকে কতটা নিরাপদ করা সম্ভব হবে, এ নিয়েও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে উন্নত বিশ্বের এই দেশগুলোতে। কারণ প্যারিসে বিশ্বনেতাদের আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতার মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে হামলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যূনতম ঝুঁকি থাকলেও আসন্ন কমনওয়েলথ সম্মেলন আয়োজন করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাস্কট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা আঙুল তুলেছেন তার পূর্বসূরি জর্জ বুশের দিকে। বাগ্যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা। কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো একহাত নিয়েছেন পুরো যুক্তরাষ্ট্রকেই। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদ হামলার জন্য দুষছেন ফ্রান্সের নীতিকে। আবার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তি প্রকট হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর। নিরাপত্তা-বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, এসব হামলার প্রধান লক্ষ্যই থাকে সারা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করা। তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে সারা বিশ্বকে বার্তা দেওয়া। ফ্রান্সের মতো একটি দেশে হামলার মধ্য দিয়ে একযোগে ছয়টি দেশে বোমা হামলার ক্ষমতা আছে তা দেখিয়ে দেওয়া। শুধু ফ্রান্স নয়, পুরো পশ্চিমা বিশ্বকেই এ হামলার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হলো, অন্যদের ওপরও আক্রমণ হতে পারে। আর ঘটনার পর পুরো বিশ্বনিরাপত্তা তটস্থ হয়ে গেল। আসলে এ ধরনের ভীতিই সৃষ্টি করতে চায় আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, প্যারিসে হামলার পর থেকেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, বোস্টনসহ বিভিন্ন শহরে। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) জানিয়েছে, প্রায় পুরো নিউইয়র্ক শহরের জনাকীর্ণ এলাকায় কয়েকটি দল পাঠানো হয়েছে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। ফক্স নিউজ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তা বাড়ানো নির্দেশ দেন। এর পরই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বাস-ট্রেন স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, প্যারিসে হামলার পর ভারতজুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ে। লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের শহরগুলোতেও বাড়তি সতর্কাবস্থা নিয়েছে ইউকে পুলিশ। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর গ্যাটউইকের একটি টার্মিনাল খালি করে ফেলা হয়। টেলিভিশন ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘আমরা এরই মধ্যে উচ্চ হুমকির মুখে আছি। এর অর্থ, যে কোনো সময় একটি হামলার আশঙ্কা অনেক বেশি এবং এ হুমকি ভবিষ্যতেও থাকবে। স্বীকার করতেই হবে, আমরা যতই শক্ত থাকি, আমরা যতই প্রস্তুত থাকি, এর পরও যুক্তরাজ্যে আমাদের এ ধরনের হুমকির মোকাবিলা করতে হতে পারে।’ ইতালিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি শহরে প্রয়োজনীয় তল্লাশির ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। প্যারিস হামলার পর রাশিয়া জুড়েও পরিবহন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

উত্তাল বিতর্ক : আইএসের উত্থানের পেছনে জর্জ ডব্লিউ বুশকে দায়ী করেছেন বারাক ওবামা।  ওবামা বলেছেন, ‘ইরাকে হামলার অনিচ্ছাকৃত পরিণামে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর বিস্তার ঘটেছে। আমাদের হামলার ফলে ইরাকে সৃষ্ট আল-কায়েদা থেকে সরাসরি বিকাশ লাভ করেছে আইএস। এ কারণেই সাধারণত গুলি ছোড়ার আগে আমাদের লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া উচিত।’ জর্জ বুশের ছেলে জেব বুশ তার বাবার পথকে সঠিক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘ইসলামি জঙ্গিরা পশ্চিমা সভ্যতাকে ধ্বংস করতে চায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর