সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

উপকূলে বাংলাদেশ-ভারত পণ্যবাহী জাহাজ চলবে

ঋতুপর্ণা রায়, নয়াদিল্লি ও রুকনুজ্জামান অঞ্জন, ঢাকা

উপকূলে বাংলাদেশ-ভারত পণ্যবাহী জাহাজ চলবে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল শুরু করতে এসওপি (পরিচালন পদ্ধতি)-তে স্বাক্ষর করেছে ঢাকা ও দিল্লি। গতকাল দিল্লিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের নৌপরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির উপস্থিতিতে

বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নৌসচিব রাজিব কুমার। এতে দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির পথটি সুগম হলো। এতদিন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নৌবাণিজ্য চলেছে ভারত মহাসাগর ঘুরে। নতুন চুক্তির ফলে পণ্যবাহী নৌযান ভারতের হলদিয়া, কলকাতা, পান্ডু, করিমগঞ্জ বা শিলঘাট থেকে রওনা হয়ে সরাসরি বঙ্গোপসাগরের পথ ধরে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মংলা, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার বন্দরে। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে এ ব্যাপারে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে চুক্তি হয়। এরপর ভারত এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রায় জেটগতিতে কাজ করে ছয় মাসের মধ্যে কার্য সমাধা করেছে। গতকাল জানানো হয়েছে খুব শিগগিরই এই নতুন রুট খুলে দেওয়া হবে। এদিকে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে পৃথক আরেকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে। ট্রানজিট ফি নির্ধারণ, বন্দর ব্যবহারসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই বৈঠক। এসওপি স্বাক্ষরের পর দুপুরে দিল্লি থেকে টেলিফোনে নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আজ (গতকাল) আমরা এসওপি-তে সই করেছি। এর ফলে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল শুরু হবে। সচিব আরও জানান, দুই দেশের যোগাযোগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী চুক্তি বলে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে পণ্য পরিবহনে উভয় দেশের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের এক সূত্রের বক্তব্য, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে শুধু নৌবাণিজ্য নিয়েই জটিলতা ছিল না। আরও অনেক বিষয় নিয়ে জটিলতা ছিল ও আছে। এরপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গিঁট খুলতে শুরু করেছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হলো জলপথে বাণিজ্যকে সরলীকৃত করার এই উদ্যোগ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, চুক্তি না থাকায় আগে দুই দেশের উপকূলে জাহাজ চলাচল করতে পারেনি। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ও ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনে কলম্বো এবং সিঙ্গাপুর সমুদ্রবন্দরকে ব্যবহার করতে হতো। এক্ষেত্রে এক দেশ থেকে আরেক দেশের দূরত্ব হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার নটিক্যাল মাইল। কোস্টাল শিপিং চুক্তির ফলে ওই দূরত্ব প্রায় তিন হাজার নটিক্যাল মাইল কমে ৬২০ নটিক্যাল মাইলে দাঁড়াবে। এতে কোনো পণ্য পরিবহনে আগে যেখানে ৯০ ডলার খরচ হতো এখন সেখানে ৩৫ ডলার খরচ হবে। পরিবহন ব্যয় কমে দাঁড়াবে প্রায় এক তৃতীয়াংশে। কর্মকর্তারা জানান, কোস্টাল শিপিং চালু হলে দুই ধরনের পণ্য (কনটেইনার ও নন কনটেইনার) পরিবহন হবে। এ জন্য আশুগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পানগাঁও এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে পোর্ট অব কল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া পানগাঁও (আইসিটি) থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলের জন্য এরই মধ্যে দুটি জাহাজ তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের এ দুটি জাহাজ দুই দেশের উপকূলে চলাচল করবে। এর মধ্যে একটি হারবার-১ (নিপা পরিবহন) এবং অন্যটি নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ ট্রাস্টের।

সর্বশেষ খবর