সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপে সাকা-মুজাহিদ

আহমেদ আল আমীন

আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপে সাকা-মুজাহিদ

আইনি লড়াইটা শুরু হয়েছে পাঁচ বছর আগে। এবার সমাপ্তি রেখা টানার পালা। মানবতাবিরোধী দুই অপরাধী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের আইনি লড়াই এখন শেষ ধাপে উপনীত। আপিলের পর এবার রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষা। বিষয়টির শুনানি হবে আগামীকাল। জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পরিণতি নির্ভর করছে মূলত ওই শুনানিতেই। এখন স্বাভাবিকভাবেই সবার দৃষ্টি সর্বোচ্চ আদালতের দিকে। কী হবে আদালতে কাল? রিভিউ নাকচ হলেই আসবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি। একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ১৬ জুন নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্ট। আর ২৯ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসিও বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালের জুলাই এবং অক্টোবরে মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর আইনি লড়াই শুরু হয় মূলত ২০১০ সালে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় মুজাহিদ গ্রেফতার হন ওই বছরের জুনে। আর গাড়ি পোড়ানোর মামলায় একই বছরের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলাদা দুটি মামলায়। এই দুই আসামির ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রধান বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ওই দিন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর আপিলের রায় প্রকাশ করেন আদালত। মুজাহিদের মামলার রায় ১৯১ ও সাকা চৌধুরীর মামলার রায় ২১৭ পৃষ্ঠার। ইতিমধ্যে মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীকে কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যেই আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেছে আসামিপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে মূলত স্থগিত হয়ে যায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি। অর্থাৎ পুনর্বিচেনার আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিভিউয়ের শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে আপিল বিভাগে। তবে রিভিউ আবেদন কখনই আপিলের সমতুল্য নয়। রিভিউ দায়েরের পর মুজাহিদের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছেন, কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুজাহিদের মামলায় রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। জানা গেছে, মুজাহিদের রিভিউ আবেদন ৩৮ পৃষ্ঠার। এতে রিভিউ আবেদন ও খালাসের পক্ষে ৩২টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে। আর ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে সাকা চৌধুরীর খালাসের পক্ষে ১০টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে। রিভিউ আবেদন নাকচ হলে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা সে বিষয়ে আসামিপক্ষ এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার অন্য দুই আসামি জামায়াতে ইসলামীর আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাননি। পরে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

মুজাহিদ ও সাকার রিভিউ দায়েরের পর আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। ওই সময় তিনি দেশে ছিলেন না। রিভিউ আবেদনে এটাই যুক্তি সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। আর মুজাহিদ প্রত্যক্ষভাবে হত্যা, ধর্ষণ ও গণহত্যার মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ নেই। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন, আপিল বিভাগের প্রকাশিত রায় পাঠ করে আমার মনে হয় রিভিউয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যেসব যুক্তি তুলে ধরবেন তাতে দণ্ডিতদের খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আশা করি, রিভিউয়েও সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকবে।

সর্বশেষ খবর