সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিভক্ত সমাজের সুযোগ নেয় জঙ্গি গোষ্ঠী

জুলকার নাইন

বিভক্ত সমাজের সুযোগ নেয় জঙ্গি গোষ্ঠী

শমসের মবিন চৌধুরী

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সমাজ পুরোপুরি বিভক্ত। এখানে হয় তুমি আমার পক্ষে, না হয় আমার বিপক্ষে। এরকম পরিস্থিতি সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে তাদের লক্ষ্য পূরণের সুযোগ করে দেয়। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা সেই সুযোগ রীতিমতো লুফে নেয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্র ও মানবতা। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। প্যারিস হামলার প্রেক্ষাপটে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, প্যারিসে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। সবারই সমস্বরে এর নিন্দা জানানো উচিত। এ ধরনের সহিংসতা বা জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে কেউ কখনোই কিছু অর্জন করতে পারেনি। তিনি বলেন, প্যারিসের এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বন্ধনে কোনো ভাঙন হবে বলে আমি মনে করি না। বরং আজকের পরিস্থিতি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইউরোপ ও পুরো বিশ্বকে আরও কাছে আনতে পারে। তবে ইউরোপে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে। সিরিয়া ও তুরস্কসহ অন্যান্য দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীদের এখন ইউরোপ যেভাবে হাজার হাজার আশ্রয় দিচ্ছে তা হয়তো আর নাও হতে পারে। অভিবাসীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ হতে পারে। এক্ষেত্রে ইউরোপ হয়তো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। বিশেষত জার্মানি যেভাবে উদার মনোভাব নিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করছিল তা হয়তো আর থাকবে না। অবশ্য জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মেরকেল ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চাপে আছেন। এখন প্যারিসের হামলাকারীদের সিরিয়ার পাসপোর্ট বহন করার ঘটনা- এ চাপকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। ফলে সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হতে পারে। কারণ লাখ লাখ মানুষের মধ্যে কে জঙ্গি আর কে ভালো মানুষ তা তো বোঝা যায় না। প্যারিস হামলা থেকে বাংলাদেশের কিছু শিক্ষণীয় আছে কিনা জানতে চাইলে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রাষ্ট্রীয় সীমান্ত মানে না। রাষ্ট্রীয় সীমান্ত তাদের কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। আজকে যেটা প্যারিসে করেছে, কালকে সেটা বার্লিনে করতে পারে। কাবুলে আজ যা হচ্ছে কাল তা চট্টগ্রামে হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। তাই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। কারণ এটা একক দলের সমস্যা নয়। সন্ত্রাসবাদের কালো আঘাত যখন আসে, তা সবার গায়েই লাগে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে অনতিবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় একসঙ্গে শপথ নিয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তবে তার আগে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে অনতিবিলম্বে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যদি পারস্পরিক দোষারোপে ব্যস্ত থাকি তাহলে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরাই এর সুযোগ গ্রহণ করবে। আমাদের এখানকার বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর এ সত্য অনুধাবন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি কোনো একক দলকে এ কথা বলছি না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন জাতীয় ঐক্যমত ছাড়া এ অপশক্তিকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। দীর্ঘ কূটনৈতিক জীবন, রাজনীতি এবং রাজনীতির চড়াই-উৎরাই শেষে অবসর নেওয়া শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় সরাসরি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর জনগণকে সম্পৃক্ত করা শুধু একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর