বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুই শিশু হত্যায় আটজনের ফাঁসি

আদালত প্রতিবেদক

ফরিদপুরের কানাইপুর পুরদিয়া হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী চম্পা আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মৌসুমী নামের এক আসামিকে খালাস  দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার এ রায় ঘোষণা করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামে পাঁচ বছরের শিশু স্কুলছাত্র ইয়াছিন আরাফাত আবিরকে অপহরণের পর খুনের দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঐশী নামের পাঁচ বছরের শিশুকে অপহরণের অভিযোগে আলোচিত রহিমা ডাকাতসহ পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের দুটি পৃথক আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। ফরিদপুরের কানাইপুর পুরদিয়া হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী চম্পা আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন শামীম মণ্ডল (২৪), বাবুল হোসেন ওরফে রাজীব হোসেন ওরফে বাবু হোসেন মাতুব্বর (২২), জাহিদুল হাসান ওরফে জাহিদ সর্দার (২৪) ও আকাশ মণ্ডল (২৪)। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি ঠাণ্ডা মাথায় ভিকটিম চম্পাকে ধর্ষণ এবং পরে খুবই নির্মম-নির্দয় ও নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ মেহগনি গাছে ঝুলিয়ে রাখে। এর আগে মামলা হওয়ার পর থেকেই অদৃশ্য এক শক্তি তদন্তসহ অন্যান্য জায়গায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে, যাতে অভিযোগ প্রমাণ না করা যায়। এ কারণে সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ এবং ময়নাতদন্তে ফরিদপুরের চিকিৎসকরা ধর্ষণ ও হত্যার আলামত দেখতে পাননি বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু ভিসেরা ও রাসায়নিক প্রতিবেদনে ধর্ষণসহ হত্যার বিষয়টি ওঠে এসেছে। এ ছাড়া ধর্ষণের পর চম্পা ঘটনাটি সবাইকে বলে দেওয়ার হুমকি দিলে আসামিরা তাকে কাপড়ের গিঁট দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন আসামি বাবুল হোসেন। তাই এ ধরনের মামলায় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ-জাতীয় অভিশাপ থেকে সমাজ ও জাতিকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান লিখন সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের মধ্যে আকাশ ও বাবুল হোসেন পলাতক ছিলেন। এ ছাড়া বাকি আসামিরা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জনের মধ্যে ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী দুলাল মিত্র বলেছেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, আসামি শামীম ‘প্রেমের প্রস্তাবে ব্যর্থ হয়ে’ চম্পাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত। ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর চম্পার চাচাতো বোন পপির গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের সময় আসামি শামীম তার ভাগ্নে বাবু ও পারভীনের মাধ্যমে চম্পাকে বাড়ির পাশের একটি মেহগনি বাগানে ডেকে নেয়। পরে রাত ৯টার পরও চম্পা গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে ফিরে না আসায় তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই বাগানে পাওয়া যায় তার ঝুলন্ত লাশ। এ ঘটনার পর ১৫ ডিসেম্বর চম্পার ভাই হাসিবুল ইসলাম বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ২০১৩ সালের ২০ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

আবির হত্যায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড : পাঁচ বছরের শিশু স্কুলছাত্র ইয়াছিন আরাফাত আবিরকে খুনের দায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পাশাপাশি আরও দুটি পৃথক ধারায় তাদের দুবার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রাবিয়া বেগম নামের এক নারীকে এ মামলায় খালাস দেওয়া হয়। গতকাল চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন হলেন সিএনজিচালক ইদ্রিস মিয়া, টেম্পোচালক মো. ফারুক এবং চক্রের সদস্য মো. সুজন ও মো. আনোয়ার। এদের মধ্যে সুজন পলাতক। তবে বেকসুর খালাসের মধ্যে রাবিয়া রহমান অটোরিকশাচালক ইদ্রিস মিয়ার স্ত্রী। আবির নগরীর হালিশহর আবাসিক এলাকার বি ব্লকের বাসিন্দা গার্মেন্ট কর্মী রিয়াজ উদ্দিন ও রীনা বেগমের  ছেলে। আবির স্থানীয় প্রাণহরি আমিন একাডেমির শিশুশ্রেণির ছাত্র ছিল। ওই এলাকায় নানার বাড়িতে আবিরদের পরিবার থাকে। টেম্পোচালক ফারুক ছিল ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া। ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট আইয়ুব খান বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় আবিরকে নিজ বাসার সামনে থেকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নেয় ফারুক। অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা থাকলেও আবির কান্নাকাটি করায় অপহরণকারীরা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সীতাকুণ্ড থানার উত্তর ছলিমপুর কালু শাহ মাজারের কাছে নাগরদোলা মিনি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের সামনে এসে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরদিন পুলিশ ওই এলাকা থেকে আবিরের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাবা রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে হালিশহর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ২০১৩ সালের এপ্রিলে অপহরণকারীদের তিনজনকে পাহাড়তলী, একজনকে চান্দগাঁও ও অপরজনকে চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামিরা প্রত্যেকে দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।

শিশু ঐশী অপহরণে যাবজ্জীবন : চান্দগাঁও থেকে ফারিয়া আফরিন ঐশী নামের পাঁচ বছরের শিশুকে অপহরণের অভিযোগে বাঁশখালীর আলোচিত রহিমা ডাকাতসহ পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে আদালত তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নূরুল বশর নামে একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। গতকাল চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এ রায় দেন। বিচার শুরুর মাত্র দুই মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা করে আদালত নজিরবিহীন রেকর্ড গড়েছেন বলেও মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনালের পিপি জেসমিন আক্তার। দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন হলেন আলোচিত ডাকাত রহিমা বেগম ওরফে রহিমা বেগম, রোখসানা, মামুনুর রশিদ, জালাল উদ্দিন ও করিম ডাকাত। এদের মধ্যে মামুনুর রশিদ হাজতে আছে। বাকি আসামিরা পলাতক। ঐশী নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ১১০ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির বাসিন্দা মো. জাহেদ হোসেনের মেয়ে। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ঐশীকে তার বাসার সামনের রাস্তা থেকে অপহরণ করে বাঁশখালীর কুতুবখালী নিয়ে যায় আসামিরা। সেখানে আটকে রেখে তার বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় ঐশীর বাবা চান্দগাঁও থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ অপহরণের ছয় দিন পর ২ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় তাকে বাঁশখালীর কুতুবখালীতে রহিমা ডাকাতের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি ঐশীর বাবা বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে ওই ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

সর্বশেষ খবর