শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রতিক্রিয়া নেই বিএনপির, হরতাল জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হয়ে গেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি বিএনপি। অন্যদিকে জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের একই রায়ের প্রতিবাদে আজ দলটির পক্ষ থেকে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মুখপাত্র, দলটির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মুখপাত্র হিসেবে দলের কোনো সিদ্ধান্ত থাকলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর এ নিয়ে দলের নীতি-নির্ধারকদের পক্ষ থেকে কোনো কিছুই তাকে জানানো হয়নি। জানা যায়, সাকার মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন সুপ্রিমকোর্ট খারিজ করার পর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ নিয়ে দলের অবস্থান কী হবেÑ তা জানার চেষ্টা করেন। তবে এ নিয়ে নেতাদের কারও কোনো মন্তব্য পাননি তিনি। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কোনো বার্তাও আসেনি। তবে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর দু-একদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের মুখপাত্র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করলেও এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের পর তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আইনের লড়াই করেছি। আমরা  হেরে  গেছি। ব্যাস। এইটুকুই প্রতিক্রিয়া।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, রায় নিয়ে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। দলের কোনো সিদ্ধান্ত হলে মুখপাত্র এ নিয়ে কথা বলবেন। প্রায় একই সুরে কথা বলেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তবে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের রায়ে হতাশ হয়েছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ দেশের জাতীয় সংসদের দীর্ঘ সময়ের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। টানা ছয়বার এমপি ছিলেন। তিনি আজ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেন, এটা নির্মম ও  বেদনার।’ সাকা চৌধুরী এখন পর্যন্ত বিএনপির পদধারী একমাত্র নেতা, মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যার সর্বোচ্চ সাজা হলো। এর বাইরে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে সাজা হয়েছে, দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও সাজা কার্যকরও হয়েছে। বিএনপি বরাবরই জামায়াত নেতাদের রায় নিয়ে চুপ ছিল। স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলেছিল বিএনপি। এ সময় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সারা দেশে বিক্ষোভও দিয়েছিল বিএনপি। পরবর্তীতে গত ২৯ জুলাই আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পর ওই দিন বিকালেই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বিএনপি। এ সময় বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছিলেন, সালাউদ্দিনকে ‘অন্যায্যভাবে’ মৃত্যুদণ্ডাদেশ  দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। রিভিউতে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন বলে তারা আশা করছেন। এদিকে সর্বোচ্চ আদালতে সাজা হওয়ার পর দলে সাকা চৌধুরীর স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ স্বাভাবিকভাবেই ‘বাতিল’ হয়ে যাবে বলে দলের সিনিয়র এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান। তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, দলের স্থায়ী কমিটিসহ যে কোনো পর্যায়ের নির্বাহী কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৮ এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি (খ) দেউলিয়া (গ) উম্নাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি ও (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত ব্যক্তি বলে পরিচিত ব্যক্তি। সাকার  ক্ষেত্রে (ক) ধারা প্রযোজ্য বলে মনে করেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে দলের কোনো স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করা হয়নি। 

জামায়াতের হরতাল : আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হরতালের এ ঘোষণা দেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফার্মেসি, সংবাদপত্র ও সংবাদপত্রের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মকবুল আহমাদ বিবৃতিতে বলেন, দলকে নেতৃত্বশূন্য করতে সরকার জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করে বিচারের নামে প্রহসন করেছে। মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীও নেই। তারপরও শুধু রাজনৈতিক কারণে তাকে সরকারি পরিকল্পনায় হত্যার উদ্দেশ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করে। মামলায় তাকে যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মুজাহিদ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর