বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

উন্নয়নে পাশে থাকব বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়নে পাশে থাকব

বাংলাদেশের

নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি। তিন দিনের ঢাকা সফরে গতকাল শেষ দিনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ সফরে ম্যাক্সিমা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।  দুপুরে ডাচ রানী বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও গার্মেন্টস শিল্পের ভূমিকার কথা রানীর কাছে তুলে ধরেন। নেদারল্যান্ডসের রানী ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এ বিষয়ে বলেন, রানীর সঙ্গে সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের ভূ-প্রকৃতিগত সাদৃশ্য রয়েছে। নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই দেশ একে অপরের সহযোগিতা করতে পারে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে রানীকে ধারণা দেন রাষ্ট্রপতি। রানীর এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলেও আশা করেন রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ : গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রানী ম্যাক্সিমা। এ সময়ও বাংলাদেশে উন্নয়নের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন রানী। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, রানী ম্যাক্সিমা গণভবনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। রানী ম্যাক্সিমা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সব সময় সহায়তা দেওয়ার জন্য নেদারল্যান্ডস প্রস্তুত। ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে যে লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ নির্ধারণ করেছে, তা পূরণের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথাও বলেন রানী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়েরও প্রশংসা করেন রানী ম্যাক্সিমা। বাংলাদেশের দুই কোটি ৯০ লাখ নাগরিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত শুনেও প্রশংসা করেন তিনি। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস ব-দ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন রানী। বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে এর অংশ হিসেবে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, ভূমি পুনরুদ্ধার, বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ এবং উপক‚লীয় এলাকায় সবুজায়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অংশ হিসেবে কৃষক, নারী, শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। কৃষকদের উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ছাড়া কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আর্থিক প্রক্রিয়ায় সব মানুষের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিন দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় পৌঁছান ডাচ রানী। মঙ্গলবার গাজীপুরে পোশাক কারখানা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ও ডিজিটাল সার্ভার সেন্টার পরিদর্শনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ম্যাক্সিমা। বুধবার রাতেই ঢাকা ছাড়েন তিনি।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তার মতে শুধু ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দেশের ৪০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা হয়েছে। এটা দেশের ব্যাংকিং খাতের একটা বড় অর্জন। সরকার এ সেবা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ঢাকা সফররত নেদারল্যান্ডসের রানীর সঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে রানী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। নেদারল্যান্ডস আমাদের অনেক পুরনো দিনের বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আমরা ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসনে যথেষ্ট এগিয়েছি। আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪০ শতাংশ ব্যাংক হিসাব রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের রানীও এ বিষয়ে প্রশংসা করেছেন।

সর্বশেষ খবর