বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাকার চট্টগ্রামে কিছুই হয়নি, উল্লাস ফরিদপুরে

প্রতিদিন ডেস্ক

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় গতকাল বহাল থাকার কথা ঘোষণার পর তার বাসস্থান এলাকা চট্টগ্রামে কিছুই হয়নি। জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের এলাকা ফরিদপুরের মানুষ আনন্দ-উল্লাস করেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় শীর্ষ এ দুই মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বেলা সাড়ে ১১টায় রায় শোনার পর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থকরা মাঠছাড়া হয়ে পড়েছেন। এমনকি তার তিন নির্বাচনী এলাকা রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতেও কোনো ধরনের ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা যায়নি। বরং ভয়ভীতি শংকা ছেড়ে সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেছে। সাকার নিজ জম্নস্থান রাউজানেও ছিল খুশির আমেজ। একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করানোর পাশাপাশি চলে আনন্দ মিছিল। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের শত শত নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরে গণজাগরণ মঞ্চ আনন্দ মিছিল করেছে। এ সময় সাকা চৌধুরীর মামলার সাক্ষী, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি সংগঠক, কবি-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী অংশ নেন। এ মামলার সাক্ষীরা স্বস্তি প্রকাশ করে ১৯৭১ সালে শহীদ অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে ও মামলার সাক্ষী প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বলেন, জাতি প্রত্যাশিত রায় পেয়েছে। আমারও ভালো লেগেছে। কারণ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এতে আমার বাবার আত্না শান্তি পাবে। তিনি বলেন, রায় যত দ্রুত কার্যকর করা যায় ততই ভালো হয়। হাবিবা সুলতানার স্বামী শেখ আলমগীর ও শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফরকে হত্যা করা হয়েছিল সাকার নেতৃত্বে। হাবিবা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তার (সাকার) অনেক ক্যাডার রয়েছে। তাই কিছুটা নিরাপত্তা জটিলতা রয়েছে। ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল ঘোষণার পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে সমাবেশে তারা বলেছেন, এ রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে ফরিদপুরবাসী কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। অবিলম্বে তারা এ রায় কার্যকরের দাবি জানান। পরে তারা একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ান। মুজাহিদের মামলার অন্যতম সাক্ষী রণজিত দেবনাথ বলেন, দ্রুত এ রায় কার্যকর দেখতে চাই। তবে সাক্ষী হওয়ায় আমি কিছুটা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিতও আছি। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। এদিকে মুজাহিদের রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ভাই ফরিদপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেস। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ মুজাহিদ কোনো অন্যায় করেননি। বরগুনা প্রতিনিধি জানান, দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখার খবরে বরগুনায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রেসক্লাব চত্বরে মিষ্টি বিতরণ করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ ৭১ বরগুনা জেলা শাখার নেতারা। লক্ষীর প্রতিনিধি জানান, রায় ঘোষণার পর লক্ষীরে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে লক্ষীর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে গিয়ে সমাবেশ করে তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রায় বহালের খবরে শহীদ সাটু হলে অবস্থিত জেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উল্লাস প্রকাশ ও মিষ্টি বিতরণ করেন। এ সময় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরা শহরের আতর আলী রোডে পুরাতন বাজার এলাকায় জেলা জামায়াতে ইসলামী প্রতিবাদ মিছিল করতে গেলে স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া করে আলতাফ হোসেন নামে এক জামায়াত কর্মীকে ধরে থানায় সোপর্দ করেছে। মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মুন্সী বিষয়টি স্বীকার করেছেন। নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা আদালত প্রাঙ্গণে আনন্দ মিছিল করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি। 

সর্বশেষ খবর