শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সেই সব দম্ভোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, দম্ভোক্তি ও বিদ্রƒপাÍক অঙ্গভঙ্গির কারণে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হতেন। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার চলাকালেও তিনি অশালীন মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করেন। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার  হন সাকা চৌধুরী। ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এরপর থেকে পৌনে তিন বছরের বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে এবং রায়ের দিন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, প্রসিকিউটরদের হুমকি, আসামির কাঠগড়ায় বসে পড়া, সাক্ষী ও চলমান রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করাসহ বহু নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তার আলোচিত-সমালোচিত উক্তিগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো :

‘আমরা নেতা হইছি বইলা এমন না যে নিজের পায়জামার ফিতা খুইল্লা জনগণের মশারি বাইন্ধা দিমু।’ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘পঞ্চম সংশোধনীর কথা আর কি বলব? সোনা মিয়ারে বানাইছে লাল মিয়া, আর লাল মিয়ারে বাসাইছে সোনা মিয়া। মিয়া কিন্তু ঠিকই আছে। সোনাডা খালি লাল হইয়া গেছে।’ দেশের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে তিনি কট‚ক্তি করে বলেন, ‘সুশীল আবার কী। ‘সু’ মানে সুন্দর ‘শীল’ মানে নাপিত, তা হলে সুশীল মানে ‘সুন্দর নাপিত’। ‘যারা মনে করছেন মায়ের বোনকে মাসি এবং পিতার বোনকে পিসি সম্বোধন করতে হবে, তাদের স্বপ্নকে চুরমার করে দিতে হবে। আমরা পানি খেতে চাই, জল খেতে চাই না। বাংলাদেশের জাতীয়বাদীরা গোসল করে, øান করে না।’ বিএনপি নেত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আগে দেখতাম কুত্তা লেজ নাড়ে, এখন দেখি লেজই কুত্তা নাড়ায়’। নারী নির্যাতন বিষয়ে তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের একটি বক্তব্যের জবাবে সাকা বলেন, ‘তিনি কেরানীগঞ্জের একজন প্রমোদ বালক, এটা কি আমি কখনও বলেছি?’/ বঙ্গবন্ধু ‘ঘোষক হলে’ আমি মুক্তিযুদ্ধের ‘সমর্থক’। ‘ভোটের আগের দিন কাঁঠাল পাতা (টাকা) ছিটালেই ছাগলদের (ভোটারদের) সমর্থন পাওয়া যাবে। আমি এসেছি কাঁঠাল (টাকা) পাতা খাওয়াতে।’ ‘ছাত্রজীবনে শেখ মুজিব আমার বাবার শিষ্য ছিলেন।’/ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারককে হুমকি দিয়ে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘চোখ রাঙাবেন না। আমি রাজাকার। আমার বাপ রাজাকার। এখন কে কি করতে পারেন করেন।’ ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না। অনেক আইন আমি করেছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন আমার করা। আপনি তো আমার করা এ আইন পড়েও দেখেননি।’ ২০১৩ সালের ১৭ জুন নিজের পক্ষে সাফাই দেওয়ার সময় ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে ফাঁসি তো আপনারা দেবেনই, কিন্তু আমি পরোয়া করি না।’ ট্রাইব্যুনালে নয় দিনের সাফাই সাক্ষ্যের পুরোটাই ইংরেজিতে দেন সাকা চৌধুরী। তাকে বাংলায় সাক্ষ্য দিতে বলা হলেও তিনি বলেন, ‘আমি বাংলায় সাক্ষ্য দিতে পারব না, ইংরেজিতেই দেব। কারণ, আমি বাঙালি না, চাটগাঁইয়া। বাংলায় তো আমি ভালো বলতে পারতাম না। টেকনিক্যাল প্রবলেম হতো। আমার মাতৃভাষা বাংলা নয়, চাটগাঁইয়া।’  ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর রায়ের দিন সাকা চৌধুরী বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে লাখ লাখ লোকের রায় দিলাম। এখন রায়ের জন্য এখানে বসে থাকতে হবে। নির্বাচন না করতে দেওয়ার জন্য এত কষ্ট। আমার কবিরা গুনাহ হলো বিএনপিতে যোগ দেওয়া।’ সে দিন তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘দিয়ে দাও ফাঁসি তাড়াতাড়ি। সাঈদী সাহেবের মতো লোককে ফাঁসি দিছ, আর আমি তো বড় গুনাহগার।’ জাতীয় সংসদের একটি অধিবেশনে তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকার, এ দেশে নতুন এক ধরনের ডিজিটাল মেশিন আবিষ্কৃত হয়েছে, যার একপাশ দিয়ে রাজাকার ঢুকিয়ে দিলে অন্যপাশ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়। আর সেই মেশিনটির নাম ডিজিটাল আওয়ামী লীগ মেশিন।’ নিজের নাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার নাম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী থেকে যদি সাকা চৌধুরী হতে পারে তাহলে আমিও বলতে পারি Bangladesh Awami League থেকে বাল BAL।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর