শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার একটি দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার একটি দিন

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ রায়ের পর গতকাল কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা (বাঁয়ে)। রাতে ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে - বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারা দিন যা করলেন সাকা-মুজাহিদ

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই শীর্ষ অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা)  চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন স্বাভাবিক। গতকাল সকালে কারাগার থেকে সরবরাহ করা ডাল ও রুটি দিয়ে নাস্তা করেন। দুপুরে ভাত খেয়েছেন সবজি ও ডাল দিয়ে। রাতের খাবার ছিল কাতল মাছ আর সবজি। মাঝে দুপুরে দুজনই তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলেও দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি বলে জানা গেছে। কারা সূত্র জানায়, খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠেন মুজাহিদ। নাস্তা করার পর দুপুরের আগে তিনি খবর পান তার আত্মীয়-স্বজনরা এসেছেন দেখা করতে। এ সময় তিনি কারাগারে আসা ১২ জনের সঙ্গেই কথা বলেন। তবে ছেলের সঙ্গে তিনি আলাদা করে কিছু সময় একান্তে কথা বলেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে যখন তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে যান, তখন তিনি বিশ্রামে ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের দেখেই তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘কী ব্যাপার। তোমরা এসেছো কেন? আমাকে তো কেউ বলেনি যে, তোমরা আসবে।’ পরে তারা প্রায় এক ঘণ্টা সময় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় সাকা মানসিকভাবে শক্ত থাকলেও স্বজনদের চোখে ছিল পানি।


 

মার্সি নিয়ে ভাইয়ের তাচ্ছিল্য মুজাহিদ পুত্রের অন্য কথা

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা গতকাল কারাগারে দেখা করেছেন। সাক্ষাৎ শেষে প্রাণভিক্ষা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী। অন্যদিকে মুজাহিদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে পরিবারের সদস্যদের কাছে বলেছেন, তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ দুই শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন বুধবার আপিল বিভাগে খারিজ হওয়ার পর গতকালই প্রথম দেখা করেন দুই পরিবারের সদস্যরা।

‘কী, মার্সি পিটিশন?’ : ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করেছেন পরিবারের সদস্যরা। সাক্ষাৎকালে তারা সাকা চৌধুরীর সঙ্গে কী বিষয়ে আলোচনা করছেন সে বিষয়ে কিছু জানাননি। এ সময় জেলগেটে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নেরও উত্তর দেননি তারা। বেলা ১২টা ২২ মিনিটের দিকে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা জেলগেটে পৌঁছে সরাসরি ভিতরে চলে যান। কারাগারে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর ১টা ২৮ মিনিটে তারা বেরিয়ে আসেন। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনাঃ এমন প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই তারা গাড়িতে চড়ে বসেন। তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী সেই প্রশ্ন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এড়িয়ে যান। প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কী, মার্সি পিটিশন?’ এরপর সাংবাদিকদের কোনো সুযোগ না দিয়েই দ্রুত গাড়িতে উঠে চলে যান তিনি। ১৫ সদস্যের দলে সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, বড় ছেলে ফায়াজ কাদের চৌধুরী, স্ত্রী তানিয়া খন্দকার, ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও ফজলুল কাদের চৌধুরী, দুই বোন জোবায়দা কাদের চৌধুরী, হাসিনা কাদের চৌধুরী, মেয়ে ফারজিন চৌধুরী, তার স্বামী জাফর খান, সাকার চাচাতো ভাই ইকবাল হোসেনসহ নিকটাত্মীয়রা ছিলেন। ১২টার দিকে সাকার ধানমন্ডির বাসা থেকে সাতটি গাড়িতে করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করতে রওনা হন তারা। সাকার আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম জানান, মোট ১৫ জন কারাগারে প্রবেশ করেন। সবাইকে সাকার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। সাকার পরিবার থাকে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১০/এ নম্বর রোডের ২৮ নম্বর ‘কিউসি রেসিডেন্স’ নামের বাড়িটিতে। কারাগারে দেখা করতে যাওয়ার আগে সকালে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা বাসায় বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।

এখনো নির্দোষ দাবি মুজাহিদের : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এখনো নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ। আমাকে যদি এভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়, তাহলে হত্যা করা হবে।’ গতকাল বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদের সঙ্গে তার স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে কারাফটকে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তার ছোট ছেলে আলী আহমদ মাবরুর। মুজাহিদ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আদেশও শুনেছেন এবং এ বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান আলী আহমদ মাবরুর। এ সময় মুজাহিদের ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছও জানান, মুজাহিদ মানসিকভাবে শক্ত আছেন। তিনি শারীরিকভাবেও ভালো আছেন। তার মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। সাক্ষাৎ করার জন্য বেলা পৌনে ২টার দিকে কারাফটকে পৌঁছান মুজাহিদের ১২ স্বজন। আধাঘণ্টা সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে আসেন তারা। মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করা ১২ স্বজন হলেন তার স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান, ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ ও ওজায়ের এম এ আকরাম, বড় ছেলে আলী আহমদ তাজদীদ, মেজ ছেলে আলী আহমদ তাহকিক, ছোট ছেলে আলী আহমদ মাবরুর, মেয়ে তামরিনা বিনতে মুজাহিদ, বড় ছেলের স্ত্রী ফারজানা জেবিন, মেজ ছেলের স্ত্রী নাসরিন কাকলি, ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা রুবাইদা, ভাগনে আ ন ম ফয়েজ হাদী সাব্বির ও স্বজন নুরুল হুদা।

সর্বশেষ খবর