শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

টিকফায় যুক্তরাষ্ট্রের ছয় ইস্যু

নারীর ক্ষমতায়ন চায় এমওইউ, ছয় সদস্যের প্রতিনিধি যাচ্ছেন আজ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ওয়াশিংটনে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় টিকফার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব ইস্যুতে আলোচনা করবে, এর একটি তালিকা তারা পাঠিয়েছে সরকারের কাছে। প্রস্তাবিত ইস্যুগুলো হচ্ছে মেধাস্বত্ব; সরকারের ক্রয়নীতি; আমদানি লাইসেন্স; কোটা, বিনিয়োগ পরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়নে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহায়তা।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ফোরাম গঠনে বহুল আলোচিত ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট’ (টিকফা) চুক্তিতে  ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সই করার পর প্রথম বৈঠকটি গত বছর এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এবার দ্বিতীয় বৈঠকটি হচ্ছে ওয়াশিংটনে। আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত এ ছয় ইস্যু ছাড়াও বাংলাদেশের পোশাক খাতে শ্রমমান উন্নয়নে দেওয়া দেশটির শর্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কোকাকোলার ট্যাক্স কমানো নিয়েও আলোচনার আভাস দিয়েছে দেশটি। জানা গেছে, দেশে কোমল পানীয় হিসেবে বাংলাদেশে কোকাকোলার ওপর আরোপিত ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ এবং এনার্জি ড্রিংকসের ওপর ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। তবে বর্তমানে এনবিআর কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস এ দুটো পানীয়র ট্যাক্সের পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ করেছে। আর এ নিয়েই আপত্তি তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির যুক্তি হচ্ছে, কোমল পানীয়র ওপর আরোপিত রাজস্ব এনার্জি ড্রিংকসের সমান হতে পারে না। মেধাস্বত্ব ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ওষুধ ছাড়া অন্যান্য পণ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মেধাস্বত্ব ছাড় সুবিধা ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ডব্লিউটিও নীতি অনুযায়ী টিকফায় সই করলেও ২০২১ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ওষুধ রপ্তানিতেও মেধাস্বত্ব ছাড় সুবিধা সম্প্রতি ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে ওয়াশিংটন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও ঢাকা মনে করছে, এ ইস্যুতে আলোচনার কোনো উপাদান নেই। নারীর ক্ষমতায়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহায়তা-সংক্রান্ত ইস্যু দুটোও টিকফার মূল উদ্দেশ্য। এটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয় বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ফলে এ দুটো ইস্যুতে বাংলাদেশ সাড়া নাও দিতে পারে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ইস্যুগুলো নিয়ে রবিবার বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হবে এমন ইস্যুগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের ইস্যুগুলো নিয়ে মুখ খুলছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যেসব ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে, সেগুলো নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত এক দশকে বাংলাদেশের রপ্তানির হার হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল এবং টিপিপি (ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সেসব বিষয় তুলে ধরা হবে টিকফার বৈঠকে। এর আগে ১০ নভেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস বার্নিকাটের সঙ্গে টিকফার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন। ওই বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ জানান, টিকফার বৈঠকে জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি ১১টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (টিপিপি) করেছে, তাতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব টিকফায় উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

টিকফার বৈঠকে যোগ দিতে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল আজ ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বলে জানা গেছে। এ দলে আরও থাকছেন পররাষ্ট্র সচিব, শ্রম সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের ডিজি এবং বস্ত্র সেলের একজন উপসচিব।

সর্বশেষ খবর