শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে

প্রণব মুখোপাধ্যায়

ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তার মতে, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কাছেই ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্কের ছবিটা একটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৭৪ সালের পর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে বিরাজ করছে। পারস্পরিক সুবিধা, সাদৃশ্য এবং      সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর নির্ভর করেই এই সম্পর্কের ভিত গড়ে উঠেছে’। গতকাল রাতে নয়াদিলি­তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘ক্যাভালরি মেমোরিয়াল লেকচার’-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন ‘ভারত এবং বাংলাদেশ কেবল প্রতিবেশী রাষ্ট্র নয়, আমরা দুই দেশই এখন ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা, ইতিহাস এবং সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা পড়েছি। আমাদের দুই দেশের এই ক্রমবর্ধমান সহায়তার ছবিটা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সাফল্যের ক্ষেত্রে বড় কাজ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ভারত সব সময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের স্বার্থেই আমরা সব সময় এই শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপরই বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের নতুন ভবিষ্যৎ তৈরিতে আমাদের এখন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই চেতনা, শক্তিকে ফিরে পেতে চাই। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে যোগাযোগ বৃদ্ধি করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে আমরা তিনটি বাস পরিসেবা চালু করেছি। এতে আমাদের মধ্যে যোগাযোগটা আরও সহজ হয়েছে। সড়ক, রেল, নদী, সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম সরবরাহের জন্য পাইপ লাইন, টেলিযোগাযোগও বৃদ্ধি করা উচিত। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহায়তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এদিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত। বৃহত্তর অখণ্ড অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করতে ভারত এবং বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব দিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একটা অভিন্ন বাজার তৈরি হওয়া উচিত এবং ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই রেডিমেড গার্মেন্ট, টেক্সটাইল, লেদার এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্ষেত্রে একযোগে কাজও শুরু করে দিয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, জাহাজ তৈরি শিল্পেও একযোগে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে জানান প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় লগ্নির ফলে সেদেশে একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে তেমনি প্রযুক্তিরও উন্নতি হবে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। এই কারণেই দুই দেশের সরকারই বাংলাদেশের মাটিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রতিস্থাপনে সহমত হয়েছে এবং দুই দেশের ব্যবসায়িক যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় পদক্ষেপ। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে ভারত-বাংলাদেশের এই সম্পর্ক চিরদিনই বিশেষ স্থান এবং অদ্বিতীয় (ইউনিক) হয়ে থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তার আশা, দারিদ্র্য নির্মূল, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধেও আগামী দিনে দুই দেশের পারস্পরিক সহায়তা আরও জোরদার হবে।

সর্বশেষ খবর