শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নামেই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের তিন ফোরাম

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের তিন ফোরাম শুধু নামেই প্রভাবশালী। কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের এই তিন ফোরাম- প্রেসিডিয়াম, জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ। দলের গঠনতন্ত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হলেও বছরের পর বছর তা অকার্যকর রয়েছে। গত দুই বছরে প্রেসিডিয়ামের এবং প্রায় তিন বছর জাতীয় কমিটির কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। চলতি বছরের প্রথম দিকে কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে যৌথভাবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হলেও এরপর আর কোনো বৈঠক হয়নি দলের থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত এ পরিষদের।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বর্তমানে সব সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় দলের  কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। যে কারণে অন্য ফোরামের বৈঠকের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই তিন ফোরামের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম বা সভাপতিমণ্ডলী যে কোনো বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তের পর তা কেন্দ্রীয় কমিটি বা কার্যনির্বাহী সংসদে পাস করানো হয়। গঠনতন্ত্রের ২৫ এর খ-ধারা অনুযায়ী কার্যনির্বাহী সংসদ বা কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে জরুরি ও অতি গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রেসিডিয়াম সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সাধারণত দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ সম্পাদক তিন দিনের নোটিসে প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান করতে পারেন। তবে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে জরুরি সভা যে কোনো সময় ডাকা যায়। নীতিনির্ধারক একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রধান ভ‚মিকা পালন করতেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। তবে গত ২০০৯ সালের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর প্রেসিডিয়ামের গুরুত্ব ও কার্যক্রম ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত বর্তমান প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। দু-একটি সভার পর গত প্রায় আড়াই বছরে এই ফোরামের আর কোনো সভা হয়নি। সর্বশেষ সভা কবে হয়েছে তা প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্য বলতেই পারেন না। তবে দলের দফতর সূত্রে জানা যায়, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এই ফোরামের সর্বশেষ সভা হয়েছে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল। দলের উপদেষ্টা পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংকার হিসেবে পরিচিত এ পরিষদেরও একই অবস্থা। দলের গঠনতন্ত্রের ২৬ ধারার (ক) অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, আওয়ামী লীগের একটি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এ পরিষদের সদস্য সংখ্যা থাকবে ৪১ জন। তবে সভাপতি প্রয়োজনে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারবেন। আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, এ পরিষদ এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। একই অনুচ্ছেদে বলা আছে, উপদেষ্টা পরিষদের ৩টি সেল থাকবে। ১. রাজনৈতিক ২. অর্থনৈতিক ৩. সামাজিক। ৩টি সেল থাকলেও কে কোন সেলের দায়িত্বে এবং সংশ্লিষ্ট সেলগুলো নিয়ে উদেষ্টাদের কী কার্যক্রম রয়েছে তার পরিষ্কার কোনো চিত্র নেই। (খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, উপদেষ্টা পরিষদ দলের চিন্তাকোষ বা ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে কাজ করবে। সেখানে আরও বলা আছে, উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের ওপর গবেষণা, মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে এবং সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দলের বক্তব্য, বিবৃতি, মন্তব্য ও প্রকাশনা-সহায়ক তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যান সরবরাহ করবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর কোনো কাজেই লাগানো হয়নি এ উপদেষ্টা পরিষদকে। ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক  পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে দলটিকে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের দৃশ্যত ভ‚মিকা চোখে পড়েনি সেই দিনগুলোতে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যখন দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয় তখন উপদেষ্টাদের ডাকা হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামীতে বৈঠক ডাকা হবে বলে আশা করি। দলের গঠনতন্ত্রের ১৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১৬৬।  এর মধ্যে প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন করে মোট ৭৩ জন, দলীয় সভাপতির মনোনীত ২১ জন, অন্যান্য ৬ জন। ১৭(খ) অনুযায়ী, জাতীয় কমিটি দলের কাউন্সিল ও কার্যনির্বাহী সংসদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। অনুচ্ছেদ ১৭(ঝ) অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর প্রথম বৈঠকের পর আর কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আইনে প্রতিবছরই রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। গঠনতন্ত্রের ১৭(ঙ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী, দলের হিসাব-নিকাশ ও বাজেটের অনুমোদন দেবেন জাতীয় কমিটির সদস্যরা। কিন্তু ২০১২ সালের পর জাতীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হচ্ছে দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব।

সর্বশেষ খবর