শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

হতাশ নেতা-কর্মীদের তৃণমূলে ডাকলেন নাজমুল হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

হতাশ নেতা-কর্মীদের তৃণমূলে ডাকলেন নাজমুল হুদা

‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে চতুর্থ দফায় নতুন দল গঠন করে এর আহ্বায়ক হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের বঞ্চিত, হতাশ নেতা-কর্মীদের নতুন এ দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান।

নাজমুল হুদা বলেন, ‘নেতা-নেত্রীর কারণে কোটি কোটি মানুষের সমর্থনপুষ্ট বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন হতে দেওয়া যাবে না। বিএনপির যাত্রা নতুন করে শুরু করতে হবে নতুন নামে। এ লক্ষ্যে তৃণমূল বিএনপির যাত্রা শুরু করলাম।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালের এই সদস্য বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি একটি ব্যর্থ দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত কমিটি গঠনে ব্যর্থতার কারণে দলটি আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ জন্য আমি সরাসরি শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করছি। নেতৃত্বে পরিবর্তন না এলে বিএনপির আর ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নয়জন সদস্যের সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন ব্যারিস্টার হুদা। বিএনপি থেকে বহিষ্কারের পর বিএনএফ, বিএনএ ও বিএমপি নামে তিনটি দল ও জোট গঠন করেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির (বিএমপি) প্রধানের দায়িত্বে থেকেই নতুন দল ঘোষণা করলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘোষণা না দিলেও বিএনপি স্বাভাবিকভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ দলের নেতা-কর্মীরা এখন সবাই তৃণমূল বিএনপির হয়ে কাজ করবেন। ‘ধানের ছড়া’-কে দলীয় প্রতীক নির্বাচন করেন তিনি। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো সমস্যা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো ধানের শীষ নিচ্ছি না, ধানের ছড়া নিচ্ছি। বিএনপি যদি ছড়া দাবি করে, তাহলে আমাকে ধানের শীষ দিতে পারে। প্রয়োজনে এ নিয়ে আইনের আশ্রয়ও নেব। এরপর যদি ছড়া না পাই ‘পাট’ তো পাব। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা আগে কোন দল বা সংগঠনে ছিলেন, তা জানানো হয়নি। মঞ্চে নাজমুল হুদার পাশে ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একাংশের চেয়ারম্যান এম নাজিমউদ্দিন আল আজাদ, যিনি এইচ এম এরশাদের সরকারে ধর্মমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী মণি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান এ আর এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিনও মঞ্চে ছিলেন। রুশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ক্রিস্টিনা বয়কোকেও সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়। মঞ্চে টানানো ব্যানারে দেখা যায় ‘তৃণমূল বিএনপি’র লাল সবুজ পতাকা। নাজমুল হুদা বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপি এখন সরকারে কিংবা সংসদে নেই। আর হরতাল-অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচিতে ব্যর্থ হয়ে অনেকটা পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই দলটি এখন নিষ্ক্রিয় ও নিশ্চিহ্নপ্রায়। তার ওপর বিএনপিকে অস্তিত্বহীন করতে একদলীয় শাসনে বিশ্বাসী শাসক দলের আগ্রাসী ভূমিকা তো রয়েছেই। মামলা, হামলা কোনোটি থেকে দলের নেতা-কর্মীরা রেহাই পাচ্ছেন না।

মাঠ পর্যায়ে দলটির এখন ‘ত্রাহি অবস্থা’ উলে­খ করে তিনি বলেন, ‘দল পরিচালিত হচ্ছে উত্তরাধিকারসূত্রে লন্ডন থেকে নির্দেশিত পথে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে স্বজনবিরোধী কঠোর অবস্থান বিএনপিকে সম্পূর্ণভাবে শাসকগোষ্ঠীর আত্নীয়দের প্রভাবমুক্ত রেখেছিল। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি তার ঠিক বিপরীত। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেই নয়, সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন এমনকি সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগেও তার সিদ্ধান্তে নিকটাত্নীয়দের প্রচণ্ড প্রভাব প্রতিফলিত হতে দেখা গেছে।’ নতুন দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে নাজমুল হুদা জানান, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচন, ৩১ মার্চ ইউনিয়ন কমিটি নির্বাচন, ১ মে থানা কমিটি নির্বাচন, ২২ জুলাই জেলা কমিটি নির্বাচন এবং ৭ সেপ্টেম্বর ত‚ণমূল বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এ ছাড়া ১ অক্টোবব নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি গণমাধ্যমসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে তার নতুন দলে যোগদানের আহ্বান জানান। কারও এজেন্ট না হয়ে দেশপ্রেমিক যে কোনো শক্তির হয়ে কাজ করতে নিজের ইচ্ছার কথাও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক এই সদস্য।

সর্বশেষ খবর