রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রাণভিক্ষা মানতে নারাজ বিএনপি-জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের কাছে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ক্ষমা চেয়েছেন’- বিষয়টি মানতে নারাজ তার দল জামায়াতে ইসলামী ও পরিবার। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে মুজাহিদের ক্ষমা চাওয়ার খবরটি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। জানতে চাইলে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া ও টেলিভিশনে কারাপক্ষের সূত্রের বরাতে প্রচারিত হয়েছে, বাবা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। মিডিয়ার উদ্দেশে বলব, আপনারা সূত্র কী জানান।’ মাবরুর বলেন, ‘মিডিয়াতে এও প্রচারিত হচ্ছে, বাবা (মুজাহিদ) প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না এ জন্য দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দেখা করেছেন। আমরা জানতে চাই, এই দুজন ম্যাজিস্ট্রেট কে? বাবা ওই দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে কী বলেছেন তাও জানতে চাই।’ মাবরুর বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীরা বাবার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেও দেখা করতে পারছেন না। তৃতীয় এক পক্ষ বলছে, বাবা প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। বাবার প্রাণভিক্ষা চাওয়ার তথ্যটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’

সাকা দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাননি : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি বলে দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল রাতে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাকা চৌধুরীর পরিবারের বরাত দিয়ে দলের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তিনি (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রাণভিক্ষা চাননি।’ আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘তার (সাকা) পরিবার বিএনপিকে অবহিত করেছেন, এ মর্মে (প্রাণভিক্ষা) একটি বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চলছে, যা আদৌ সত্য নয়।’

দলের সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তার পরিবার দলকে আরও অবহিত করেছেন, যে অভিযোগে তাকে প্রাণদণ্ড  দেওয়া হয়েছে, এ ধরনের কোনো অপরাধ তিনি করেননি। তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আদালতেও যুক্তি ও দালিলিক প্রমাণ দাখিল করেছিলেন। কিন্তু তিনি ন্যায়বিচার পাননি। তার পরিবার দলকে আরও জানিয়েছেন, তিনি নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে ন্যায়বিচার লাভ করবেন।’

পরিবারের সংবাদ সম্মেলন : গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে মুজাহিদের পরিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই জাহান বলেন, ‘আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতিকে তার সাংবিধানিক অভিভাবক মনে করেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগত জীবনে একজন আইনজীবী ও আইনবিদ, তাই আশা করি রাষ্ট্রপতি নাগরিক হিসেবে মুজাহিদের আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে মামলাটিতে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অধিকার মুজাহিদের রয়েছে।’ মুজাহিদের স্ত্রী বলেন, ‘আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানাই, তার বিরুদ্ধে একটা মামলা বিচারাধীন, সেই মামলা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাকে যেন আইনি লড়াই চালানোর অধিকার দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তার (মুজাহিদ) নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’

জামায়াতের বিবৃতি : দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে দাবি করেন, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে পরামর্শের জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তিনি পরিবারের কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যেও মুজাহিদ আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে চেয়েছেন বলা হচ্ছে। জামায়াতের এই নেতা বলেন, আইনজীবীরা মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্ষমা চাওয়ার যে খবর প্রচার হচ্ছে, তা সঠিক নয়। সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসনে কারা কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করা হয় দলটির পক্ষ থেকে।

সর্বশেষ খবর