রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কী ছিল সেই আবেদনে

নিজামুল হক বিপুল

সরাসরি অপরাধ স্বীকার না করলেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ পৃথক আবেদনে রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা (প্রাণভিক্ষা) প্রার্থনা করেছেন। যাতে তারা দুজনই ক্ষমা চেয়েছেন। তাদের আবেদন গতকাল দুপুরের পর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায়। পরবর্তীতে সেটি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। রাষ্ট্রপতি শেষতক দুজনের আবেদনই নাকচ করে দেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দুই যুদ্ধাপরাধী নিজেদের অপরাধ মাফ করে দিন কথাটি আবেদনে না লিখলেও ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে কার্যত অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। নইলে তারা ক্ষমা চাইতেন না। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে যাওয়া এ দুই মানবতাবিরোধী অপরাধী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ তাদের অনুকম্পা আবেদন দুটিতে তারা বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করেন। পৃথক এ দুটি আবেদনে দুজনই সবশেষে লিখেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনি আপনার সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। সূত্র জানায়, দুই যুদ্ধাপরাধী একাত্তরের আলবদর বাহিনী প্রধান মুজাহিদ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম যুদ্ধাপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর অনুকম্পা বা প্রাণভিক্ষা চেয়ে করা আবেদন দুটি ছিল এক পৃষ্ঠার। ১০-১২ লাইনে লেখা ওই অনুকম্পা আবেদনে দুজনই রাষ্ট্রপতির কাছে লিখেছেন, তারা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন। আদালতে তারা সঠিক বিচার পাননি। এ দাবি করে পৃথক আবেদন দুটিতে এ দুই যুদ্ধাপরাধী সর্বশেষে লিখেন, রাষ্ট্রপতি নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে যেন ক্ষমা করে দেন।

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও মো. আরিফুল ইসলাম প্রাণভিক্ষার আবেদন দুটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ শেষে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে আবেদন দুটি আইন মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখানে আইনি সব কাজ শেষ করে রাতেই অনুকম্পার আবেদন দুটি নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে অপরাধ স্বীকার করা বা না করার বিষয় নয়। বরং অনুকম্পা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন তারা।

বঙ্গভবনে কী নিয়ে গেলেন সাকা পরিবার : যুদ্ধাপরাধের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিতে গিয়ে বিফল হয়ে ফিরেছে তার পরিবার। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গভবনে যান সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। ‘পিটিশন টু দ্য অনারেবল প্রেসিডেন্ট ফ্রম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী’ শিরোনামের চিঠিটি নিয়ে হুম্মাম ভিতরে গেলে মূল ফটকের রিসিপশনে তাকে বসানো হয়। এ সময় বঙ্গভবনের ডেসপাস শাখার কর্মকর্তারা তাকে জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে সরাসরি কোনো আবেদন করা যায় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিতে হবে। এরপর হুম্মাম রিসিপশন থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানান, তাদের চিঠি নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছে। বিকাল ৫টার দিকে তারা বেরিয়ে আসেন। বঙ্গভবনের ফটকের সামনে গাড়িতে বসে ছিলেন ফারহাত কাদের চৌধুরী। হুম্মাম কাদের বলেন, ‘উনি (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) যে ডকুমেন্টগুলো জমা দিয়েছিলেন সেগুলো ভেরিফাই করে বিচার করার জন্য আমরা একটা আবেদন করেছি। সেই কপিটাই এখানে দিতে এসেছিলাম।’ এর আগে বঙ্গভবনে প্রবেশের সময় তিনি বলেন, ‘এটি একটি মিস ট্রায়ালের আবেদন। রাষ্ট্রপতি যেহেতু সংবিধানের গার্ডিয়ান, এ জন্য আমরা তার কাছে মিস ট্রায়ালের আবেদন করছি।’

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষমা প্রার্থনা প্রসঙ্গে হুম্মাম কাদের বলেন, ‘যতক্ষণ না বাবার সঙ্গে দেখা করে এবং বাবার মুখ থেকে শুনছি- ততক্ষণ বিশ্বাস করি না যে বাবা মার্সি পিটিশন (প্রাণভিক্ষা) করেছেন। এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ এরও আগে দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে দলের নেতাদের পাশে রেখে সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী ও ছেলে জানিয়েছিলেন, সংবাদ সম্মেলনের পরই তারা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলো তুলে ধরবেন। আইনি সব প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তোড়জোড়ের মধ্যেই চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর