সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

টুঁ শব্দ নেই বিএনপিতে

শফিউল আলম দোলন

দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পর ‘টুঁ শব্দটি’ পর্যন্ত নেই বিএনপিতে। সবাই একেবারে চুপচাপ। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতার মুখ বন্ধ। দলের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গতকাল এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বিষয়টি এড়িয়ে যান, আবার কেউ কেউ বিব্রতবোধ করেন। দু-একজনকে শনিবার শাহজালাল বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেও গতকাল অসুস্থতার অজুহাতে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপিতে একমাত্র সাকা চৌধুরীই স্বাধীনতার বিপক্ষের লোক ছিলেন, তার ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর আর কোনো সমস্যা নেই। বাকি সবাই এখন মুক্তিযোদ্ধা। অথচ ফাঁসি কার্যকরের আগের দিনও দু-একজন নেতাকে সাকা  চৌধুরী ও তার পরিবারের পক্ষে দু-একটি কথাবার্তা বলতে শোনা গেছে। কিন্তু ফাঁসি কার্যকরের পর থেকে ব্যক্তিগতভাবে দূরে থাক, দলীয়ভাবেও ন্যূনতম কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। খোঁজ-খবর নেননি কেউ সাকা পরিবারের সদস্যদের। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির পর দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি হরতালসহ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও কয়েক দিন আগে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন গুলশান কার‌্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সাকা চৌধুরী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার’ বলে উল্লেখ করেছেন। এমনকি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্যও সাকার অবদান ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। অথচ ফাঁসি কার্যকরের পর কোনো রকমের কর্মসূচি প্রদান দূরে থাক, সেই মুখপাত্রও গতকাল আর কোনো কথা বলেননি। জামায়াতে ইসলামীর একেকজন নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর যেভাবে নীরব থেকেছে বিএনপি, সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পরও গতকাল একই রকমের নীরবতা পালন করে দলটি। দলের তিনজন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, যা বলার ও করার দলীয়ভাবেই করা হবে। ব্যক্তিগত কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের অধিবাসী বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য গত তিন দিন ধরে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে যোগদানের পর প্রায় দেড় যুগ বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রামের এই রাজনীতিক। এর মধ্যে বিএনপি দলীয় টিকিটে দুবার এমপিও নির্বাচিত হন এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে চারদলীয় জোট শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ সময়ও কারাবরণ করেন এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির চরম ক্রান্তিলগ্নে মাত্র ৩০টি আসনের মধ্যেও এমপি নির্বাচিত হন সাকা চৌধুরী। দেশের স্বাধীনতালগ্নে তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দলের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন বলে নাম প্রকাশ না করে স্বীকারও করেন কেউ কেউ। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকরের পরমুহূর্তেই যেন সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। দলীয় নেতাদের আচরণে মনে হচ্ছে এই নামটি  যেন তারা এর আগে কখনই শোনেননি। সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে ‘সহি-শুদ্ধ’ হয়েছে বিএনপি। এতদিন দলে এক ধরনের বোঝা হিসেবে ছিলেন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তার মৃত্যুর পর থেকে দলে আর কোনো সমস্যা নেই। বিএনপিতে এখন যারা আছেন- ‘সবাই খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা’। গতকাল স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের কমপক্ষে একডজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে সবাই কোনো না কোনোভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে তাদের কোনো ধরনের মতামত বা প্রতিক্রিয়া প্রদান দূরের কথা, সাকা প্রসঙ্গে কোনো সংবাদে তাদের নামটি পর্যন্ত উল্লেখ না করার জন্য অনুরোধও করেছেন বেশ কজন। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের একজন নেতা বলেছেন, ‘যে গেছে তাকে যেতে দিন। তার সঙ্গে আমাদেরকেও আর মাইরেন না।’ একই সঙ্গে তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার বিপক্ষের পরিবারের সন্তান হিসেবে নিজ দলের এই নেতা সম্পর্কে আমাদের যদি এতটাই অ্যালার্জি থাকে, তাহলে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমরা জোট করছি কীভাবে? তার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি দলের কোথাও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর