মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নেতৃত্বহারা জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এর আগে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। বিচারের তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সুবহান, এটিএম আজহার, মীর কাসেম আলীসহ অনেকে। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হয় জেলে, না হয় আত্মগোপনে রয়েছেন। কেন্দ্রসহ সারা দেশে দলের কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। প্রকাশ্যে কোনো নেতা-কর্মী বের হতে পারছেন না। এর ফলে দলের নেতৃত্বের শূন্যতার কারণে প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, আত্মরক্ষাই করতে পারছে না দলটি। এ ছাড়া ধরপাকড় ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলটি এখন কাবু হয়ে পড়েছে।

ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীল এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৫ নভেম্বর বগুড়া জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কাহালু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলীকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ২১ নভেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি হারুন-অর রশিদ, ১০ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেনকে আটক করে পুলিশ। কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা আটক। যে কয়জন আটক হননি তারা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। ফলে সারা দেশে দলের নেতৃত্বে শূন্যতা চলছে। দলের দায়িত্বশীলদের দাবি, ৫ নভেম্বর থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের আট হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আবদুল গণি মণ্ডল, বগুড়া পূর্ব সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যক্ষ আবদুল হক সরকার, বগুড়া পশ্চিম সাংগঠনিক জেলার নন্দীগ্রাম পৌরসভা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল আলিম, খুলনা মহানগরী ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী খাদিজা আক্তার, সেক্রেটারি মমতাজ আক্তার, ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া পৌরসভা জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মনজির হোসাইন, কুমিল্লা মহানগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামায়াত নেতা কাজী গোলাম কিবরিয়া, চুয়াডাঙ্গা পৌর জামায়াতের আমির মফিজুর রহমান জোয়ারদার, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল হক, গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুল ওয়ারেস, মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল হক বিশ্বাস, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা তৈয়ব আলী। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের ৫৮ সদস্যের ৪৭ জনের বিরুদ্ধেও রয়েছে শত শত মামলা। প্রশাসনের ধরপাকড়ে রাজনীতির মাঠে এক রকম আত্মগোপনে রয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। নেতা-কর্মীদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় থেকে বাঁচতে নেতা-কর্মীরা বিকল্প কৌশল হিসেবে ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন। এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুর, মালিবাগ, উত্তরা, বাড্ডা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, সূত্রাপুর, ওয়ারী, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, মীর হাজারীবাগ এলাকার জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতারা এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন। দলের শীর্ষ পর্ষদ ২০ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একমাত্র ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক প্রকাশ্যে দেশের বাইরে রয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে দল চালাচ্ছেন। জানা যায়, তার শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। সারা দেশে নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে বের হতে পারেন না। তাদের দাবি, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদের শাসনামলে জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও অনেকেই জামিনে বের হচ্ছেন। মামলা দায়ের হয়েছে হাজার হাজার। আসামি করা হয়েছে ৫ লাখ নেতা-কর্মীকে। প্রকাশ্যে আসতে পারেন না কেউ। শতাধিক নেতা-কর্মী নিহত এবং হাজার হাজার কর্মী আহত হয়েছেন। সরকার জামায়াত-শিবিরের অফিস অবৈধভাবে বন্ধ করে রেখেছে। দেখামাত্র জামায়াত-শিবির কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য ও দেশকে রাজনীতিশূন্য করার উদ্দেশেই সারা দেশে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার করছে।

সর্বশেষ খবর