মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাকিস্তানকে কড়া প্রতিবাদ জানাল বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে গতকাল তলব করে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র ও মৌখিকভাবে সতর্ক করে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। জানা যায়, ফাঁসি কার্যকরের পর রবিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেদিনই ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের বক্তব্য দেওয়ার ব্যাখ্যা জানাতে গতকাল দুপুরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। সে হিসেবে গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন পাক হাইকমিশনার। সূত্র জানায়, আধা ঘণ্টার এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে হাইকমিশনারকে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিচার নিয়ে যে কোনো মন্তব্য করা অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলানোর শামিল। এটা দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরে হাইকমিশনারের হাতে তুলে দেওয়া হয় নোট ভারবাল। পাকিস্তানের হাইকমিশনার কূটনৈতিক পত্র গ্রহণ করে দ্রুততম সময়ে তার সদর দফতরে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক তারিক মো. আরিফুল ইসলামসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। বৈঠকের পর অতিথি ভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এড়ানোর জন্য পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে যান পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলম। পরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মিজানুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। হাইকমিশনারকে আমাদের বক্তব্য ইসলামাবাদকে জানাতে বলা হয়েছে।’ পরে বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আমরা অত্যন্ত হতাশ। আগের বারও ভেবেছি, বিচারের রায় নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। এবারও ভেবেছিলাম, তারা কোনো মন্তব্য করবে না। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, একমাত্র তারাই বিচারের রায় নিয়ে মন্তব্য করল। অন্য কোনো দেশ এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।’ তিনি বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে শুধু পাকিস্তান কেন পৃথিবীর কোনো দেশেরই নেতিবাচক বক্তব্য আমরা সহ্য করব না।’ তবে এ ঘটনায় পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের কোনো অবনতি হবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবাদ জানানোর তথ্য জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের পক্ষগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে। সেই সঙ্গে এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিবৃতি দেওয়া থেকে পাকিস্তান এবং সেখানকার ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন বলেও আশা করে বাংলাদেশ।

প্রতিবাদপত্রে যা বলা হয়েছে : বাংলাদেশের নোট ভারবালে বলা হয়, প্রকাশ্যে দণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষ নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কথা তারা আরও একবার প্রমাণ করল। এ ধরনের অযাচিত বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো ছাড়া আর কিছু নয়। এটা অগ্রহণযোগ্য। পাকিস্তানের বিবৃতিতে বিচারব্যবস্থাকে ‘ত্র“টিপূর্ণ’ বলার যুক্তি খণ্ডন করে বলা হয়, ফাঁসি কার্যকর হওয়া ব্যক্তিরা একটি পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন, স্বচ্ছ, পক্ষপাতহীন এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিমুক্ত বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। শুধু তাদের অপকর্মের বিচারেই রায় হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারও কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনার কোনো সুযোগও ছিল না। প্রতিবাদপত্রে আরও বলা হয়েছে, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক বক্তব্য দেওয়ার অধিকার পাকিস্তানের নেই। ১৯৭৪ সালের চুক্তি সম্পর্কে পাকিস্তানের ভ্রান্ত বক্তব্য প্রসঙ্গে বলা হয়, চুক্তিটি যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও কুকর্মকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। প্রতিবাদপত্রে আঞ্চলিক শান্তি ও সম্প্রীতির বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রমাগত আগ্রহ দেখিয়ে আসছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া : সূত্রমতে, মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গতকাল উঠে আসে পাকিস্তানের বিবৃতির প্রসঙ্গ। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের নাক গলানো এ ধরনের বিবৃতির বিষয়ে কড়া অবস্থান নিতে হবে।’ হাইকমিশনারকে তলব করার কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানালে, তাকে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

হাইকমিশন বন্ধের দাবি : বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতারা। একই সঙ্গে তারা পাকিস্তান-প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবিও করেন। গতকাল সকালে নগরীর নিউমার্কেট চত্বরে অনুষ্ঠিত হরতালবিরোধী সমাবেশে তারা এ দাবি করেন। সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সর্বশেষ খবর